নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

একাত্তর ও লাভ-লোকসানের হিসাব

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২০

একাত্তর ও লাভ-লোকসানের হিসাব
সব সময় লাভ-লোকসানের হিসেব মেলে না, যেমন মেলেনি ১৯৭১ সালে।

মানুষের মস্তিষ্ক, ব্রেইন লাভ-লোকসানের হিসাব কষে আর আত্মা হিসাব কষে ন্যায়-অন্যায়ের। যারা মস্তিষ্কের হিসাব মেনে সিদ্ধান্ত নেয় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময় ও সুযোগ বুঝে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে। কিন্তু যারা আত্মার হিসাব মেনে, হৃদয়ের চাওয়া থেকে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কখনোই সিদ্ধান্ত পাল্টায় না।

যারা বুদ্ধি দিয়ে হিসাব কষে লাভ-লোকসান বিবেচনা করে ভালোবাসে, সময়ের পরিবর্তনে যখন দেখে হিসেবে ভুল হয়ে গেছে তখন ভালোবাসাও বদলে যায়। আর কিছু মানুষ কোনো হিসাব করে না, আত্মার ভেতর থেকে ভালোবাসা জন্ম নেয় আর পাগলের মতো ভালোবাসা শুরু করে দেয়, সময়ের স্রোত যেদিকেই যাক, যত বাধাই তার সামনে আশুক সে ভালোবাসার পথ থেকে সরে দাঁড়াতে জানে না, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে প্রমাণ করে তার ভালোবাসার সত্যতা।

১৯৭১ সালে কিছু মানুষ ভালোবাসার তাগিদে, ন্যায়-অন্যায়ের বোধ থেকে, হৃদয়ের টানে মুক্তিযোদ্ধাদের দলে নাম লিখিয়েছিলেন আর কিছু মানুষ হিসেব কষেছিল লাভ-লোকসানের, শক্তি-সামর্থের, তাই তারা পক্ষ নিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর।

পাকিস্তানি বাহিনীর বিশাল প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আর অপরপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে অধিকাংশ অপ্রশিক্ষিত সাধারণ মানুষ, অতি সাধারণ অস্ত্র, প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো সহযোগিতাও নেই। সুতরাং হিসাব বলে- বাংলাদেশ পরাজিত হবে, অসংখ্য মানুকে হত্যা করা হবে আর যারা পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নেবে তারাই হবে পরবর্তীতে এদেশের শাসনকর্তা, সুযোগ-সুবিধাভোগী। কাজেই লাভ-লোকসানের হিসাব যারা করেছে তারা সেদিন রাজাকার, আল-বদর, আল-শাম্স বাহিনী বানিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে খুশি করার জন্য এই বাঙালিদের উপর চালিয়েছে অবর্ণনীয় নির্যাতন আর পাকিস্তানিদেরকে করেছে বিভিন্ন সহযোগিতা।

অপরপক্ষে যারা ন্যায়-অন্যায়ের হিসাব করেছে, আত্মার তাগিদে দেশকে ভালোবেসেছে, দেশের মানুষকে ভালোবেসেছে তারা জীবন দিয়ে চেষ্টা করে গেছে তাদের ভালোবাসার সত্যতা প্রমাণের। তাদের রক্তস্নাত পথের উপর দিয়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। ন্যায়-অন্যায়ের বোধ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সিদ্ধান্তের কোনো পরিবর্তন করতে হয়নি। কিন্তু রাজাকারদের সিদ্ধান্ত পাল্টেছে। তাদের উচিত ছিল যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান চলে যাওয়া যেহেতু তারা দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে এবং যুদ্ধে তারা পরাজিত।

কিন্তু লাভ-লোকসানের হিসাব যখন পাল্টে গেছে তখন তারা নানাভাবে নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করেছে, কেউ কেউ পক্ষ পাল্টে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে, কেউ আবার মাথায় পতাকা বেঁধে, দিবস পালন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি হবার ভান করছে।

মুক্তিযোদ্ধা সাজার ভান না করে ন্যায়-অন্যায়ের বোধ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখুন, সব জায়গা লাভ-লোকসানের হিসেব চলে না। নিজের পরিবার, নিজের দেশ, নিজের জাতির অস্তিত্ব যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন লাভ-লোকসান, জয়-পরাজয়ের হিসাব না করে জীবন দিয়ে হলেও অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করতে হয়।