নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

কীভাবে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২০

সুলতানি আমল পর্যন্ত এই বঙ্গভূমি স্বাধীন ছিল। টাঙ্গাইলের করটিয়ার ঐতিহ্যবাহী পন্নী (পূর্বে এই বংশের নাম ছিল কাররানি) পরিবারের উত্তরসূরি সুলতান দাউদ খান কাররানি ছিলেন বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন সুলতান [বাংলাপিডিয়া - দাউদ খান কররানী]। ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজমহলের যুদ্ধে এই বঙ্গভূমির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি জীবন দেন। সুলতান দাউদ খান কাররানির আমলে স্বাধীন সুলতান হিসাবে তার নামেই খুতবা পাঠ করা হতো এবং তার নামেই মুদ্রা প্রচলিত ছিল।

কীভাবে আমরা স্বাধীনতা হারিয়েছিলাম

পিতা সুলতান সুলেমান খান কাররানি ও জৈষ্ঠ ভ্রাতা সুলতান বায়াজীদ খান কাররানির মৃত্যুর পর ১৫৭২ সালে সুলতান দাউদ খান কাররানি ক্ষমতায় আসীন হন। তিনি শুধু বাংলার সালতানাত নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না, তিনি শের শাহ শুরির মতো উচ্চাভিলাষী ছিলেন এবং সমগ্র ভারত উপমহাদেশ এই বাংলার অধীন করার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি সুলতান হয়েই বাংলার সমস্ত অঞ্চল বশীভূত করে নিজের নামে খোতবা ও মুদ্রা প্রচলন করেন। 

তার লোক লস্কর ও সৈন্য সংখ্যা ছিলো প্রচুর। ৪০,০০০ সুসজ্জিত অশ্বারোহী সৈন্য, ৩৩০০ হস্তী, ১,৪০,০০০ পদাতিক সৈন্য এবং এর মধ্যে বন্দুকধারী, গোলন্দাজ, তীরন্দাজ প্রভৃতি সকল শ্রেণির সৈন্যই ছিল। ২০,০০০ আগ্নেয়াস্ত্র- এর অধিকাংশই ছিল প্রাচীর ধ্বংসকারী কামান, বহু সশস্ত্র নৌযান ও যুদ্ধের অন্যান্য সরঞ্জামও মওজুদ ছিলো। এমতবস্থায় তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সীমান্তে গোলযোগ সৃষ্টি করেন। মুঘল সাম্রাজ্যের সাথে বেশ কিছু যুদ্ধ হয় তার, তিনি কিছু যুদ্ধে জয়ী হন এবং কিছু যুদ্ধে পরাজিতও হন। সর্বশেষ ১৫৭৬ সালের ১২ জুলাই রাজমহলের যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও বন্দী হন এবং তাকে হত্যা করা হয়। [উইকিপিডিয়া - দাউদ খান কররানী]

তিনি এই বঙ্গভূমির স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জীবন দিয়ে যান। তবু তার মৃত্যু ও পরাজয়ের মাধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। ঐতিহাসিক বিচারে এই দাউদ খান পন্নীই বাংলার ইতিহাসে সর্বশেষ স্বাধীন শাসনকর্তা ছিলেন। পন্নী রাজবংশের পরাজয়ের পর বারো ভূঁইয়াখ্যাত পন্নীদের অনুগত দৃঢ়চেতা কমান্ডার ও জমিদারগণ দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারকে অস্বীকার করে আঞ্চলিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও পরে অবশ্য তারাও মোঘলদের বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হন। অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে এই বঙ্গভূমি পরিচালনা করেছে মোঘল সম্রাটদের অধীনস্ত ও মোঘল সম্রাট কর্তৃক নিয়োগকৃত নবাবগণ (নায়েব)।

উল্লেখ্য, সুলতান দাউদ খান কররানী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে খানজাহানের হাতে নিহত হওয়াকে দিল্লির সম্রাট ভালো চোখে দেখেন নি। তিনি এই বীরের প্রতি যথোচিত সম্মানজনক ব্যবহার না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে তিনি এর জন্য দায় স্বীকার করে এজন্য অনুতপ্ত হন এবং পন্নী বংশের পরবর্তী সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। বাদশাহের আনুকূল্যে পরবর্তী পন্নীগণ বাংলাসহ অনেক এলাকায় শাসনকার্য পরিচালনা করেন। মুঘল আমল ও ব্রিটিশ আমলেও এই পন্নী পরিবারের সদস্যগণ অত্যন্ত সততার সাথে, ন্যায়পূর্ণভাবে জমিদারি করেছেন এবং সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। এই পরিবারেরই সদস্য হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান্ন পন্নী।

এই অঞ্চলে মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার পেছনে সবচেয়ে বেশি যাদের অবদান তারা হলেন সুলতানী শাসকগণ ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আগত বিভিন্ন সুফী-সাধকগণ।