নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

হালাল-হারাম সুস্পষ্ট নাকি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ

প্রকাশিত: জানুয়ারী ০৫, ২০২১
হালাল-হারাম সুস্পষ্ট নাকি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ
শুকরের গোস্ত হারাম?
- হ্যাঁ, হারাম।
মৃত পশুপাখির গোস্ত হারাম?
- হ্যাঁ, হারাম।
সুদ হারাম?
- হ্যাঁ, হারাম।
মদ হারাম? 
- হ্যাঁ, মদ হারাম।

এসব হারাম কোরানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। অর্থাৎ যা আল্লাহ হারাম করেছেন তা স্পষ্টভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। কিন্তু গান গাওয়া কি হারাম? ছবি তোলা কি হারাম? দাড়ি কাটা কি হারাম? এগুলো হারাম হলে কেন স্পষ্টভাবে আল্লাহ তা বলে দেননি? তিনি কি এগুলো হারাম করতে ভুলে গেছেন? নাউজুবিল্লাহ,আল্লাহ কোনো কিছু ভুলে যান না। তাহলে কি তিনি এগুলো মুফতি, ওয়ায়েজদের জন্য রেখে দিয়েছেন হারাম করার জন্য? নাকি রসুলের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে গেছেন?

যা সুস্পষ্টভাবে হারাম তার দায়িত্ব আল্লাহ নিজের হাতেই রেখেছেন। এ ব্যাপারে তিনি কাউকে সমকক্ষ রাখেননি। তাহলে রসুলাল্লাহও কি হারাম করার অধিকার রাখেননি? চলুন তিনি (স) নিজে কি বলেছেন জেনে নিই।

“হে মানুষেরা! অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছে। অন্ধকার রাতের খণ্ডসমুহের ন্যায় ফিৎনা-ফাসাদ দ্রুত ছুটে আসছে। আল্লাহর কসম! তোমরা আমার উপর কোনো দায় চাপাতে পারবে না। কেননা আমি কেবল সে জিনিসই হালাল করছি, যা কোর’আন হালাল করছে এবং কেবল সে জিনিসই হারাম করছি, যা কোর’আন হারাম করছে” রসুলের ইন্তেকালের আগে অসুস্থ অবস্থায় দেওয়া ভাষণ থেকে। অপরদিকে কোরআনে এ বিষয়ে আয়াত আছে ” সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা।

ইসলামে হারামের তালিকা অতি সংক্ষিপ্ত। অন্যদিকে হালালের সংখ্যা অগনিত। অর্থাৎ যা হারাম নয় তাই হালাল। তবে মানুষের জন্য হানিকর বিষয়গুলো বড়জোর মন্দ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সুস্পষ্ঠভাবে হারাম ঘোষণা করা যায় না। সেই অধিকার আল্লাহ কাউকে দেননি। কারণ, হারাম বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাকে তাকে হারামের অধিকার দিলে মানুষ মন-মর্জি মতো হারাম ঘোষণা করতে থাকবে। তাই আলেম, পীর-দরবেশ, রাজা-বাদশাহ, নেতা, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোনো কিছু হারাম করার কোনো অধিকার কারো নেই। যদি কেউ তা করার দুঃসাহস করে, তা হলে বুঝবে হবে সে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করছে। দ্বীনি আইন-বিধান প্রণয়নে আল্লাহর নিরঙ্কুশ অধিকারকে যারা কেড়ে নিতে চাচ্ছে, তাদের এ কাজকে যারা খুশি মনে মেনে নেবে ও গ্রহণ করবে, অনুসরণ করবে, তারা আল্লাহর সাথে তাদের শরিক করার মতো মারাত্মক অপরাধ করবে। শিরকের এ অপরাধ আল্লাহ কিছুতেই মাফ করবেন না। সূরা আশশুরায় আল্লাহ বলেন :

“ওদের কি এমন শরিক বা উপাস্য আছে নাকি, যারা ওদের জন্য দ্বীনের এমন বিধান রচনা করে দিচ্ছে, যার জন্য আল্লাহ কোনো অনুমতিই দেননি? ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা হালাল-হারাম নির্ধারণের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব দিয়েছিল তাদের পাদ্রি ও পণ্ডিতদের। কুরআন মজিদ এ দিকে ইঙ্গিত করেই বলেছে : ওরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে ওদের পাদ্রি-পণ্ডিতদের পালনকর্তা বানিয়ে নিয়েছে আর ঈসা মসিহকে। অথচ ওদের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কেবল এক আল্লাহর দাসত্ব ও বন্দেগি করতে।

আলী ইবনে হাতিম পূর্বে খ্রিষ্টধর্ম অবলম্বনকারী ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে যখন দেখতে পেলেন, নবী করিম সা: ওই আয়াত পড়ছেন, তখন তিনি বললেন: হে রসূল! ওরা তো ওদের পাদ্রি-পণ্ডিতদের ইবাদত করেনি! রসূলে করিম সা: জবাবে বললেন, ‘তাই নাকি? এ পাদ্রি-পণ্ডিতরাই তো ওদের জন্য হালাল-হারাম নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং ওরা তাই সাগ্রহে ঐকান্তিকভাবে মেনে নিয়েছে। আর কুরআনে এটাকেই বলা হয়েছে ওদের ‘ইবাদত’ অর্থাৎ এ রূপ করাই এবাদত (হুকুম পালন)। ‘এবাদত’ বলতে যা বোঝায়, তা ওরা করেছে সেই পাদ্রি-পণ্ডিতদের। (তিরমিজি)

কি সাংঘাতিক! বর্তমান মুসলমানগণ ইসলামের বিধিবিধান তথা হালার হারামের বিষয়ে ঠিক এই কাজটিই করছে। দীনের আদেশ নিষেধের (হারাম হালালের) অধিকার তারা ছেড়ে দিয়েছে মুফতি, মাওলানাদের উপর। তারাও খ্রিষ্টান পাদ্রীদের মতো ধর্মীয় ব্যাপারে জনসাধারণের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে। এগুলো করে পার্থিব সম্পদও কামাই করছে।

এ বিষয়ে আল্লাহ আরো বলেছেন : ‘তোমাদের মুখে যা আসে তাই বলে দিও না- এটা হালাল ও এটা হারাম। এতে আল্লাহর নামে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা চালানো হবে। আর যারাই আল্লাহর নামে এ ধরনের মিথ্যা কথা প্রচার করে, তারা কখনই কল্যাণ বা সাফল্য লাভ করতে পারে না।’ (সূরা নহল : ১১৬)