নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

মানুষ যে কারণে নিজেই নিজের বিধাতা হতে পারেনা

প্রকাশিত: জানুয়ারী ০৯, ২০২১

মানুষ যে কারণে নিজেই নিজের বিধাতা হতে পারেনা
মানবসভ্যতার এই পর্যায়ে আদম সন্তান কি না করেছে!

জ্ঞানের কোন ক্ষেত্রে সে নাই?

সে আজ গ্রহ থেকে গ্রহানুতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে,নজরুলের সেই কথা না মেনেও আজ বিশ্বকে দেখা যায় ঘরে আবদ্ধ থেকেই, এই মানুষ সূর্য থেকে ১০ গুণ শক্তিশালী সূর্য বানিয়েছে,কৃত্রিম মাংস  উৎপাদন করছে যা কি না আরও সুস্বাদু ও নিরাপদ। 

এতোকিছু করতে পারলে তার নিজের চলার পথ,সেই পথের বিধান সে বানাতে পারবে না কেন? বাঁধা কোথায়?

মানুষ কেন নিজেই নিজের বিধান তৈরি করতে পারে না?

মানুষ স্রষ্টার প্রতিনিধি (বাকারা-৩০) হলেও তাকে এতোটুকু ক্ষমতা দেয়া হয় নি যে সে নিজেই নিজের বিধাতা হতে পারে।

বিস্তর আলোচনায় না গিয়ে ৩ টি পয়েন্ট উল্লেখ করলেই উম্মুক্ত মানুষিকতার লোকদের জন্য যথেষ্ট। 

  1. মানুষ নিরপেক্ষ না।
  2. মানুষ স্বার্থপরতা ত্যাগ করতে পারে না
  3. আইনের প্রয়োগক্ষেত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।

১ম পয়েন্টে আসা যাক,

মিটিংয়ে আছেন গরম লাগছে,"এই ফ্যানটা ছাড়েন তো।"

পাঠকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি,

কখনো কি অন্য সদস্যদের কথা ভেবেছেন?

দ্বিতীয়ত,

একজন মানুষ যখন তার মতোই অন্য দশজনের জন্য বিধান রচনা করবে সেটা "সবার জন্য সমান" লেখা থাকলেও সেই বিধানের বিধাতা চাইবে নিজের ক্ষেত্রটা বুঝানোর। এ বিষয়টা বিস্তারিত বলার প্রয়োজন বোধ করছি না। বর্তমানে অনেকেই  আইনের হর্তাকর্তাদের সম্মুখীন হয়েছেন,তাদের দাপট সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আছে। 

তৃতীয়ত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা,

অর্থাৎ যার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কত রাত জেগে  বিধান বানালো সেই বিধানের ব্যবহার,যখন ব্যবহার হবে সেই কাল,  ভবিষ্যতকাল  সম্পর্কে মানুষ অজ্ঞ। অর্থাৎ মূল থিমটাই মানুষের জ্ঞানের বাইরে।

এই পৃথিবীর সবকিছু মানুষের অধীন(সূরা জাসিয়া-১৩) করে দিলেও সার্বভৌমত্বের অধিকার, হুকুম দেয়ার অধিকার কি স্রস্টা কাউকে দিয়েছেন? 

এক্ষেত্রে স্রস্টার পরিষ্কার ঘোষণা, 

هُوَ الْحَيُّ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ فَادْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ۗ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

(আল মু'মিন  - ৬৫)

তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোন হুকুমদ্বাতা  নেই। অতএব, তাঁকে ডাক তাঁর খাঁটি এবাদতের মাধ্যমে। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর।

এই হুকুমদ্বাতার জায়গায় মাবুদ দেয়া অথচ আরবী ইলাহ এর বাংলা অর্থ হুকুমদ্বাতা। 

 ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

(আল মায়িদাহ - ৪৪)

 যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।

 ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

(আল মায়িদাহ - ৪৫)

 যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।

 ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

(আল মায়িদাহ - ৪৭)

যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।

এখানে আরেকটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার।

১। বিশ্বাসগত (Faithfully/بأمانة) দিক থেকে আমরা পূর্ণ ঈমানদার বা বিশ্বাসী।

এক্ষেত্রে কেউ আমাদের বিশ্বাসে বিন্দু পরিমান ভুল বের করতে পারবে না।

২। কিন্তু কার্যত (De facto বা عمالياۃ) আমরা নির্ভেজাল মোশরেক।

ব্যক্তিগত জীবনে ছোটখাটো কিছু হুকুম মেনে সমষ্টিগত জীবনে, বৃহত্তর, জাতীয় জীবনে পাশ্চাত্যের দেয়া বিধান মেনে নিয়ে জুমায়,ঈদে মুসাল্লা বগলে দাবিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি এই ভেবে যে জান্নাতে বুঝি চলে গেলাম।এই দ্বিমুখিতা যদি  যদি শেরক না হয় তবে শেরক কোনটা,এই আমাদের মতো বোকার স্বর্গে আর কেউ বাস করে কি না জানা নাই।এমতাবস্থাতেও কেউ আমার গালে তালুর উল্টো পিঠ বুলিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করবে আমি দাঁড়িতে খুর লাগিয়েছিলাম কিনা।

শেরক্ যে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না এটা কে না জানে অথচ আমরা আজ হাজারো আমল করলেও জাতিসুদ্ধ শেরকে নিমজ্জিত। 

আল্লাহ বলেন,

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

(আন নিসা - ৪৮)

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল।

আল্লাহর সার্বভৌমত্বে , সেরাতুল মুস্তাকীমে অর্থাৎ তওহীদে যে ব্যক্তি অটল থাকবে , বিচ্যুত হবে না , পৃথিবী ভর্তি গােনাহও তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না । আল্লাহর নবী বলেছেন- বান্দাদের সাথে আল্লাহর চুক্তি ( Contract ) হচ্ছে যে তারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ হিসেবে মানবে না , তাহলেই আল্লাহ তাদের কোনাে শাস্তি দেবেন না ( জান্নাতে প্রবেশ করাবেন ) ( হাদিস । মােয়াজ ( রা . ) থেকে বােখারী , মুসলিম ]

আনাস ( রা . ) বলেন ' আমি রসুলাল্লাহকে বলতে শুনেছি যে , আল্লাহ বলেন , হে আদম সন্তান ! যদি তুমি জমিন ভর্তি গুনাহ করে থাক , তারপর যে অবস্থায় তুমি আমার সাথে কাউকে শরিক করােনি সে অবস্থায় তুমি আমার নিকট আসলে , আমি তােমার কাছে জমিন ভর্তি ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব আনাস রা . থেকে তিরমিযি ]

একদিন রসুলাল্লাহ বললেন , “ যে ব্যক্তি বলল আল্লাহ ছাড়া কোনাে ইলাহ নেই সে জান্নাতে যাবে । আবু যার ( রা . ) বললেন , যদি সে চুরি ও ব্যভিচার করে তবুও জান্নাতে যাবে ? আল্লাহর রসুল বললেন তবুও জান্নাতে যাবে । এ কথায় সাহাবী কতটা বিস্মিত হলেন তা বােঝা যায় এ থেকে যে , তিনি বারবার রসুলকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন- চুরি ও ব্যভিচার করার পরও ? তখন আল্লাহর রসুল বললেন , হ্যা , সে চুরি করলেও , ব্যভিচার করলেও , এমনকি আবু যরের নাক মাটিতে ঘষে দিলেও ( হাদিস : বােখারী ও মুসলিম )

অনেকে এই আশায় বুক বেঁধেছে ঈমান(!) যেহেতু আছে একদিন না একদিন তো জান্নাতে যাবই।তাদের জন্য এই বিষয়টা জেনে আশায় বুক বাঁধা উচিৎ। 

وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

(আত তাগাবুন - ১০)

আর যারা কাফের এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, তারা তথায় অনন্তকাল থাকবে। কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল এটা।

তাহলে উপায়?

এতোকিছু কি লিখে বুঝানো যায়।

۞ قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

(আয্‌-যুমার - ৫৩)

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সুতরাং আসুন স্রস্টা আমার  আপনার কাছে যে আমানত দিয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার করি এবং মিষ্টি কথায়, সুরেলা আওয়াজে পাগল না হয়ে নির্ভেজাল তওহীদের সন্ধান করি এবং এক্ষেত্রে অবশ্যই একটি কথা মাথায় রাখতে হবে,

الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ۚ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ

(আয্‌-যুমার - ১৮)

যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।