নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

জেহাদের বিপরীতই হচ্ছে ফিতনা-ফ্যাসাদ/কেওয়াজ

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২১

ঈমান আর আমল মিলে ইসলাম। ইসলামে জেহাদ এক পবিত্রতম আমল। এর উপরে কোনো আমল অন্তত ইসলামে নেই। অর্থাৎ ঈমানের পরেই জেহাদের স্থান। যারা জেহাদ করেন তাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন। যারা জেহাদে প্রাণ বিসর্জন করেন তাদের জন্য মহান আল্লাহ রেখেছেন সবচেয়ে মূল্যবান উপহার। তাদেরকে মৃত বলার অধিকারও দেননি তিনি। এছাড়াও যারা জেহাদ করেন তাদের ব্যাপারে অসংখ্য মর্তবা ঘোষিত হয়েছে। আলোচনা সেদিকে নিচ্ছি না। বিষয় হচ্ছে যারা এত বড় মর্তবা পাবেন, যাদেরকে আল্লাহ এত ভালোবাসবেন তাদের কাজটা কেমন হতে পারে? নিশচয় সেই কাজটাও অনেক মহ, অনেক পবিত্র, অনেক বিরাট হবে। নিশ্চয় সেটা কোনো বিশৃংখল আমল হতে পারে না। 

জেহাদের বিপরীতই হচ্ছে ফিতনা-ফ্যাসাদ

হ্যাঁ, অবশ্যই। জেহাদ এক পবিত্র আমল। মানবজাতির শান্তির জন্য সবচেয়ে মূল্যবান প্রাণটুকু নিয়ে সমস্ত প্রকার ফেতনা ফ্যাসাদের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করার নাম জেহাদ। আর অস্ত্র হাতে নিয়ে জেহাদের নাম কেতাল। অথচ এই পবিত্র আমল আর বাহ্যত যা ফেতনা-ফ্যাসাদ সেগুলোকেই জেহাদের সাথে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। 

যে কোনো আমলের যেমন কিছু নিয়ম শৃংখলা থাকে তদ্রুপ জেহাদ/কেতালেরও নিয়ম কানুন আছে। জেহাদের ঐ নিয়ম যথাযথভাবে পালন না করলে সেটা আর তখন জেহাদ থাকে না। সেটা হয়ে যায় ফেতনা/ফাসাদ তথা কেওয়াজ/কাজিয়া। একদিকে আল্লাহ যুদ্ধের আদেশ দিচ্ছেন। অন্যদিকে তিনি ফেতনা ফাসাদকে ঘৃণা করেন। তাঁর দৃষ্টিতে ফেতনা সৃষ্টি করা মানুষ হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ। আর একজন নিরপরাধ মানুষ হত্যা করা পৃথিবী ধ্বংস করার মতোই অপরাধ। 

আসুন এবার সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নে। আজকে আমাদের মাঝে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঝে মধ্যেই যে জেহাদ ঘটতে দেখি, শহীদ হতে দেখি সেগুলো কি আসলেই জেহাদ? যারা এতে মারা যান তারা কি সত্যিই শহীদ? জেহাদের নিয়মনীতির মধ্যে যুদ্ধে জড়িত নয় এমন কাউকে আক্রমণ করা যৌক্তিক নয়। গাছ কাটা, খাবার পানি নষ্ট করা বৈধ নয়। শত্রুপক্ষ হতে হয় সুস্পষ্ট। অর্থাৎ কোনো ঈমানদারের বিরুদ্ধে অপর ঈমানদারের যুদ্ধ করা জায়েজ নয়। কোনো মুসলমানের রক্ত অপর মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। কেবল কাফের এবং মোশরেক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই জেহাদ করতে হবে। একটা আপেলকে ছুরি দ্বারা দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হলে যেমন দুটো অংশের আর কোনো সম্পর্ক থাকে না ঠিক তেমনি যুদ্ধে লিপ্তে দুইটা পক্ষের আর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। এমন অবস্থা হওয়ার আগে জেহাদ বৈধ হয় না। 

আজ আমরা কি দেখি? গতকাল জেহাদের ময়দানে মুখোমুখি লড়াই করলাম। তাদেরকে ইট মারলাম। মাথা ফাটালাম। তারা গুলি করলো। আমাদের মাঝে কতক লোক মারা গেল। তাদেরকে শহীদ আখ্যা দিলাম। পরদিন এই পক্ষ ঐ পক্ষ মিলে মৃতের জানাজা দিলাম। পরশু শুক্রবারে একই মসজিদে একই ইমামের পেছনে জুমআর নামাজ পড়লাম। জিলাপী খেলাম। কি হলো, এটা কেমন কথা? এমনটা হলে ঐদিন যা করলাম সেটা জিহাদ না রে ভাই। এইটা যা করলাম সেইটাই হচ্ছে ফেতনা/ফাসাদ। এককথায় কাজিয়া-ঝগড়া/কেওয়াজ। এইটারে আল্লাহ হত্যার চেয়েও (দুনিয়া ধ্বংসের মতো) ঘৃণা করেন। আর এইটা করে আমরা দাবি করছি আমরা শহীদ হচ্ছি। 

জেহাদ করার আগে শত্রু চিনুন। শত্রু-মিত্র আলাদা করুন সেইভাবে যেইভাবে একটি আপেলকে ছুরি দ্বারা দুইভাগ করা হয়। জেহাদ করুন তাদের বিরুদ্ধে যারা স্বীয় অবস্থান পরিবর্তন করে আমার পক্ষে না আসলে চির জীবনই শত্রুতা বজায় থাকবে। কোনো বিষয়ে তাদের সাথে আপস হবে না। এইরকম শত্রুতা না হলে জেহাদ করিয়েন না। যদি করেন সেটা জেহাদ হবে না। সেটা হবে ফিতনা/ফাসাদ/কাজিয়া/কেওয়াজ, বিশৃংখল মারামারি। এগুলোতে যারা মারা যাবে তারা গণ্ডগোলে পড়ে জাহেলিয়াতের ভোগের শিকার হবেন। এরা কখনোই জেহাদের মতো মহান ও পবিত্র আমলের মর্তবা পেতে পারে না।