নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

মৃত্যু নিয়ে আমার ভাবনা

প্রকাশিত: মার্চ ০৬, ২০২১

২০১৭ সালের মাঝামাঝি কোন একসময় থেকে আমার মাথায় হুট করেই একটা জিনিস জেঁকে বসে। সেটা হলো মৃত্যু। সময়ে অসময়ে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, জায়গা-বেজায়গায় সে আমার মস্তিষ্ক, চিন্তা-চেতনাকে কব্জা করে নেয়। সমানে থাকা চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়ে যায়, সঙ্গীসাথী চিন্তিত হয়ে পড়ে 'কী হলো আবার!'

আমি ভাবি আমার মৃত্যু কখন হবে কোন অবস্থায় হবে এবং এর পরের জগৎটা কেমন এটা নিয়ে আমার কৌতূহল কাজ করে।

মৃত্যু নিয়ে আমার ভাবনা
লেখক সারোয়ার জাহান

বদরের যুদ্ধ শেষে যখন আবুল জাহল-উতবা-শায়বাদেরকে বদর প্রাঙ্গনে কুয়ায় নিক্ষেপ করার পর রাসূলাল্লাহ (সা) তাদের লক্ষ্য করে বলেন,

"হে কুয়ার অধিবাসী উতবা, শায়বা,উমাইয়া ও আবু জাহল! আল্লাহ তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা যথাযথভাবে পেয়েছো? আমি তো আমার রবের প্রতিশ্রুতি বাস্তবরুপে পেয়েছি।" তখন আসহাবরা জিজ্ঞেস করলেন, "হে আল্লাহর রাসূল যারা মরে পচে গিয়েছে তাদেরকে আপনি সম্বোধন করছেন।" রাসূলাল্লাহ বলেন, "আমার কথা তোমরা যেমন শুনতে পাচ্ছো তারাও তেমন শুনতে পাচ্ছে, সাড়া দিতে পারছে না।" [সিরাত ইবনে হিশাম]

যখন বৃদ্ধ কাউকে দেখি যাদের চুল-দাঁড়ি শুভ্র, চামড়া কুঁচকে গিয়েছে, ঢিলা হয়ে গিয়েছে, কোমরটা সামনের দিকে হেলে পড়েছে তখন মৃত্যু চিন্তা আমাকে একটু বেশী কব্জা করে । না জানি কখন কী হয়ে যায়। এমন অনেক লোক চলে গেল যারা ছিল চায়ের কাপের সঙ্গী । সেগুলো ভাবতে গেলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে সে আজ নেই।থাকলে হয়তো চায়ের অর্ডার ১ টা নয় ২ টা হতো। কত সমবয়সী আত্মীয় চলে গেল। হয়তো এমনিভাবে আমিও...

এগুলোতো এ পাড়ের ভাবনা। কিন্তু ঐ পাড়ের ভাবনাটা কেমন?কী আছে সেখানে? এটাতো হাতের নতুন ঘড়ি নয় যে সবকিছু খুলে যন্ত্রগুতিগুলো দেখলাম কেমনে কী।

"সেদিন অর্থাৎ, সমাবেশের দিন আল্লাহ তোমাদেরকে সমবেত করবেন। এ দিন হার-জিতের দিন। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তার পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। যার তলদেশে নির্ঝরিনীসমূহ প্রবাহিত হবে, তারা তথায় চিরকাল বসবাস করবে। এটাই মহাসাফল্য।

আর যারা কাফের এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, তারা তথায় অনন্তকাল থাকবে। কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল এটা।" [সূরা তাগাবুন ৯-১০]

এখানে ২য় বাক্যের একটা শব্দ "অনন্তকাল" আমাকে সবচেয়ে বেশী ভাবায়।কী উপায় আছে যদি একটিবার সেই জায়গায় ঢুকে পড়ি!

দুনিয়ার পেছনে ছুটে চলা লোকগুলোকে যখন দেখি তখন এই ভাবনাটা আরো জেকে বসে। মাথাটাকে হালকা নাড়া দেই সরে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু যায় না।

শতকরার হিসেবে ক'জন লোকই বা একথাগুলো জানে বা কখনো শুনেছে?তারাতো জানে পাপটাপ করলে কিছুকাল জাহান্নামে জালিয়ে হাউজে কাউসারের পানি দিয়ে ধুয়ে জান্নাতে দাখিল করাবেন।যেহেতু মুসলামানের ঘরে জন্মেছি।

হয়তো এই কথাটাই তাদের সবচেয়ে বেশী চিন্তাভাবনাহীন শিক্ষিত পশুতে পরিণত করেছে।

আবার ক'জন লোক এটা বিশ্বাস করে যে, আমরা যা করি তা আল্লাহ করে না, আমরাই করি।আমাদের ইচ্ছাশক্তি তো এজন্যেই, হিসেবটাতো এজন্যই হবে। আবার কিছু লোকতো শুধু ইনশাআল্লাহ,আল্লাহ ভরসার নামে আপনাকে আশায় বুক বাঁধিয়ে তিন মিনিট আগে সমস্ত দোষ আল্লাহর উপর চাপিয়ে নিজেকে পাপমুক্ত করেন।

তাঁর (আল্লাহ) হুকুম ছাড়া যেহেতু গাছের পাতা নড়ে না সেহেতু আমি খুন করলে সেটাও আল্লাহর হুকুমেই হয়েছে! 

সৃষ্টির শুরুর ইতিহাস, গোড়ার ইতিহাস না জানা আমরা আমাদের ৩য় কি কোন জায়গা হবে? স্বর্গ নরকের মাঝামাঝি কোথায়? যেখানে স্বর্গের সুঘ্রাণও নেই আবার অগ্নির আঁচও নেই?

শুনি যে আছে।কিন্তু আমি কোরানে কোথাও পেলাম না। জায়গা দুইটাই পেলাম স্বর্গ আর নরক।

যদি এই লোকগুলোকে "অনন্তকাল" বিষয়টা খোলাসা করা যায় তাহলে তাদের সমাজব্যবস্থা, দৈনন্দিন জীবন-যাত্রা কি একইরকম থাকবে?

এই মূল,মৌলিক কথাগুলো, আমাদের প্রকৃত পরিচয়ের ইতিহাস কারাই বা লুকালো,সবতো খোলাই আছে,সবার ঘরে ধূলায় ধূসরিত হয়ে ২-৩টি কোরআন তো আছে। কমপক্ষে ১ টি তো আছেই। তাহলে কাকে দোষ দিবো।

আঙ্গুলটা আগে নিজের দিকে তুলি তারপর অনেককে পাওয়া যাবে দোষী করার।

স্রষ্টা বলেন," যারা আমাকে পাওয়ার জন্য আমার রাস্তা তালাশ করে তারা আমার রাস্তা যদি খুঁজে নাও পায় আমি আল্লাহ স্বয়ং তাকে রাস্তা দেখিয়ে দেই।" [সূরা আনকাবুত-৬৯]