নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

আফগানিস্তানে একটু স্বস্তি ফিরে আসুক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২১

ট্রাম্প প্রশাসনের আমল থেকেই দৃশ্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ বছরের মে মাস পর্যন্ত সেখানে মার্কিন শেষ সৈন্যটি থাকার কথা ছিল। তবে জো বাইডেন প্রশাসন সেটা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারকে তালেবানরা তাদের বিজয় এবং আমেরিকার পরাজয় হিসেবে দেখছে। আফগানিস্তান এমন এক দুর্জয় ভূমি যেখানে দু- দুটো পরাশক্তি (রাশিয়া ও আমেরিকা) পিঠ দেখাতে বাধ্য হয়েছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, আমেরিকান সৈন্যরা আফগানিস্তান ত্যাগ করলে তখন তালেবান ও আমেরিকার ছত্রছায়ায় গঠিত সরকারের মধ্যে সম্পর্কটা কি হবে? খুব সহজেই বলা যায় এ দুটো শক্তির মধ্যে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী রূপ নিতে বাধ্য। সরকারের চেয়ে তালেবানরা প্রভাবশালী এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। তাই তালেবানরা আপসে না হলে শক্তি প্রয়োগ করে এ সরকারকে উৎখাত করবে। আমেরিকার সামরিক সমর্থন ছাড়া এ সরকার এতিম হয়ে যাবে। এভাবে গাছে তুলে মই নিয়ে গেলে সরকারের বিপদ ছাড়া ভাগ্যে কিছুই জুটবে না। গাছে তুলে আমেরিকার মই নিয়ে যাওয়ার এই স্বভাব অতি পুরনো।

প্যাট্রোলরত অবস্থায় এক সৈন্য আফগানিস্তানের শিশুদের সাথে কথা বলছে। ছবি: ফ্লিকার

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর সন্দেহভাজন হামলাকারী আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে চলা এ হামলায় মাত্র কয়েকদিনেই তালেবান সরকার ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে যায়। কিন্তু তারপর নদীর জল অনেক গড়ালেও তালেবানরা টিকে আছে। এরমধ্যে পৃথিবীর পট অনেক বদলে গেছে। আফগানিস্তান হামলার পর ইরাকে হামলা করে সেখানকার দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী শাসক সাদ্দাম হোসেনের সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে, তার ফাসিঁ কার্যকর  করা হয়েছে। অনুরূপভাবে লিবিয়া আক্রমণ করে ৪২ বছরের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফীকে হটানো হয়েছে। তারও মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। যার জন্য আমেরিকা আফগানিস্তানে হামলা করেছে সেই আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনও পলাতক অবস্থায় পাকিস্তানের এবোটাবাদে আমেরিকার বিশেষ বাহিনীর আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এদিকে সিরিয়ায়ও আমেরিকা হামলা চালিয়েছিল। বাশারপুত্র আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টা করা হয়েছে। এরই ফাকেঁ ইসলামিক স্টেট নামে এক জঙ্গিগোষ্ঠীর তীব্র উত্থান ঘটেছিল। তারা সামরিক শক্তিবলে ইরাক, সিরিয়ার বিশাল ভূখণ্ড দখল করে কথিত খেলাফত রাষ্ট্র কায়েম করেছিল। নৃশংস কর্মকাণ্ড প্রদর্শন করে তারা পৃথিবীতে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বের এখানে ওখানে তাদের সদস্যরা হামলা করে বহু নিরস্ত্র মানুষকে খুন করেছে। শেষ পর্যন্ত তারাও ইতিহাস হয়ে গেছে। খলিফা বাগদাদীর খেলাফত আমেরিকা ও তার মিত্রদের দ্বারা ধূলিস্মাৎ হয়েছে। কিন্তু আজও টিকে আছে তালেবান। 

নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে পাততাড়ি গোটালে সেখানে গৃহযুদ্ধের সূচনা ঘটে। উত্থান ঘটে তালেবান শক্তির। তারা অস্ত্রের বলে পুরো দেশ দখল করে নিয়ে সেখানে কথিত ইসলামি আমিরাত গঠন করে। কিন্তু কট্টরপন্থী শরীয়া আইনের কারণে বিশেষ করে সে দেশের নারীরা চরম অবস্থায় পতিত হয়। তাদের লেখাপড়া, বাইরের কাজ ইত্যাদি বন্ধ হয়ে একেবারে গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। সম্প্রতি বিবিসির পক্ষ থেকে তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তাদের প্রতিনিধিরা তালেবান নেতাদের সাথে সাক্ষাতে যায়। সেখানকার নেতারা বিবিসির প্রতিনিধিদের কাছে এটাই তুলে ধরতে চেয়েছে যে তারা নারীদের শিক্ষা-কর্ম ও অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যথেষ্ঠ স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষপাতী। তারা মনে করে না তাদের অতীত সরকার নারীদের বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করেছে। এবারও তারা এমন কিছু করবে না বলেই তারা জানাতে চেয়েছে। কিন্তু তালেবানরা অস্বীকার করলেও এটা সত্য যে কট্টরপন্থী শরীয়া আইনে বিশ্বাসী তালেবানরা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই ইসলাম কায়েমে বিশ্বাসী। এমনিতে তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকার লোকজন মুখে যথেষ্ট উদার হিসেবে পরিচিতি দিলেও আড়ালে তারা বলছে ভিন্ন কথা। 


বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একজন স্থানীয় বাসিন্দা পরে আমাদের সাথে কথা বলেন তার নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে। তিনি আমাদের বলেন, তালেবান আমাদের সাথে সাক্ষাৎকারে যা বলেছে, বাস্তবে তারা তার চেয়ে অনেক বেশি কট্টর। দাড়ি কাটার কারণে তারা গ্রামবাসীদের চড় মেরেছে, বা মারধর করেছে, বা গানবাজনা শোনার জন্য তারা স্টিরিও সেট ভেঙে দিয়েছে বলে তিনি জানান।" তাদের কথা শোনা ছাড়া মানুষের কাছে আর কোন বিকল্প নেই," বিবিসিকে তিনি বলেন, "এমনকি ছোটখাট ব্যাপারেও তারা গায়ে হাত তোলে। মানুষ ভয় পায়।" 


আসলে যারা কট্টর শরীয়তে যারা বিশ্বাসী তারা কখনো এর বাইরে যেতে পারবে না। মানুষকে দিয়ে জোর করিয়েই তাদেরকে শরীয়ত বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্মে জোর জবরদস্তি না থাকলেও কট্টরপন্থায় জোর জবরদস্তি করেই শাসনব্যবস্থা কায়েম রাখতে হয়। তবে পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। তালেবানদের মাঝেও পরিবর্তন এসেছে। তাদের একটা অংশ মনে করে আগের মতো কট্টরপন্থায় তাদের ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না। আবার পুরনো মতে বিশ্বাসীরাও আছেন। সুতরাং পুরাতন এবং আধুনিকদের মাঝেও দ্বন্দ্ব হবে। তারপর যদি পুরনো মতের অংশ শক্তিশালী হয় তবে আফগানিস্তান আবার পুরনো আফগানিস্তানে ফিরে যাবে। মানুষ আবারও ব্যক্তি স্বাধীনতা হারাবে। জোর করে ধর্মীয় বিধান মানার যে পুরনো রেওয়াজ তা প্রতিষ্ঠা পাবে। হয়তো সেটা নিয়ে আবারও মানুষের জীবন বিষিয়ে উঠতে পারে। কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে মানুষ বিদ্রোহও করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে এর শেষ কোথায়? তালেবানরা কি মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা, ধর্মীয় বিধান পালনে স্বাধীনতা দিয়ে আফগানিস্তানকে শান্তিপূর্ণ করে তুলতে পারবে? নাকি আবারও পরিবর্তনের জন্য নতুন করে নতুন যুদ্ধের সূচনা হবে? আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অশান্তির দাবানলে পুড়ছে। আফগানিস্তানে একটু স্বস্তি ফিরে আসুক। মানুষ বুক ভরে একটু নিঃশ্বাস নিক।