নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

আল্লাহ যে গোষ্ঠীকে মাইরের উপরে রেখেছেন

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২১

এই যে তথাকথিত মজলুম আলেম ওলামাগণ যুগের পর যুগ কেবল মাইরের উপর আছেন, এর কারণটা কি আমরা বুঝি? এরা কিন্তু বলবে এদের উপর আল্লাহর পরীক্ষা চলছে, অথচ খোদ বিশ্বনবীকে আল্লাহ তেরো বছরের বেশি পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি, তেরো বছরের মাথাতেই রাষ্ট্রশক্তি অর্পণ করেছিলেন, অন্যদিকে এদেরকে গত হাজার বছর ধরেই রেখেছেন মাইরের উপর এবং দৌড়ের উপর। কাজেই এটা যে পরীক্ষা নয়, গজব- সেটা বোঝার বাকি থাকে না। এখন আমরা প্রশ্ন করতে পারি- গজব কেন? এদের উপর আল্লাহ কি একটু সদয় হইতে পারেন না? এদেরকে একটু শক্তি-সামর্থ্য দিতে পারেন না?

আল্লাহ যে গোষ্ঠীকে মাইরের উপরে রেখেছেন
হ্যা, এই প্রশ্নের জবাব নিশ্চিত করার জন্যই হয়ত আল্লাহ মাঝে মাঝে এদের হাতে একটু/আধটু শক্তি-সামর্থ্য দেন। যাতে মানুষ নিজেদের চোখেই দেখতে পারে এদেরকে কোথাও শক্তি-সামর্থ্য দিলে এরা কত ভয়ংকর হয়ে ওঠে এবং ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে নিজেদের সবটুকু শক্তি নিয়ে দুর্বলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে ২০১৩ সালের পর এই গোষ্ঠীটি ভালোই শক্তি অর্জন করেছিল। সরকারের আনুকুল্য পেয়েছিল। বড় বড় আকাবিররা, রাহবাররা, মুরুব্বিরা সরকারের শীর্ষমহলের সাথে ওঠাবসা ও সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পেয়েছিল। ওই সময়টা সত্যিই অন্যরকম ছিল। সরকার দলের এমপি-মন্ত্রীরা টুপি ও আলখেল্লা পরে যখন ওয়াজ মাহফিলে বক্তার পাশে বসে থাকতেন, তখন বাহ্যিক বেশভূষা দেখে ঠাহর করা মুশকিল হয়ে যেত কোনটা জনপ্রতিনিধি আর কোনটা ওয়াজের বক্তা। এমনকি সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা অকৃত্রিম আন্তরিকতা নিয়ে সাংবাদিকদের বলতেন- কওমী মাদ্রাসা থেকে কখনও জঙ্গি হয় না!

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই গোষ্ঠী ভালোভাবেই নিজেদেরকে সংগঠিত করে নিতে পেরেছিল। ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিকে ব্যবহার করে বিশাল সমর্থক শ্রেণি তৈরি করে ফেলেছিল। মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে একক নেতৃত্বের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিল। কিন্তু তাদের এই সংহতির ফলে যে শক্তিটার জন্ম হয়েছিল, সেই শক্তি দিয়ে তারা কী করল?


তারা ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও হামলা শুরু করল। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ফেরকা, ভিন্ন বিশ্বাস ও ভিন্নমতের মানুষের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা আরম্ভ করল। শুধুই সংখ্যার জোরে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করতে লাগলো। আইন-আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে লাগলো। এমনকি সংখ্যার অহংকারে অন্ধ হয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা করতেও বাদ রাখল না। মসজিদের মাইক ব্যবহার করে, কখনও মিথ্যা গুজব রটিয়ে, কখনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলাম অবমাননার ইস্যু তুলে দিয়ে নিরীহ ও নির্দোষ মানুষের উপর হামলা করতে লাগলো। হাজার হাজার নিরীহ মানুষের চোখের অশ্রু ঝরালো।


আইন-আদালতকে তোয়াক্কা না করে ওয়াজ মাহফিল ও ধর্মীয় সমাবেশে প্রকাশ্যে তারা হুংকার দিতে লাগলো-

১. সারা দেশে আগুন জ্বলে উঠবে।

২. সারা দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে।

৩. এমন আগুন জ্বলবে বঙ্গোপসাগরের পানি দিয়ে আগুন নেভাইতে পারবেন না।

৪. তওহীদী জনতা পেশাব করে দিলে ভেসে চলে যাবেন।

৫. জিহ্বা টেনে ছিঁড়ে ফেলা হবে।

৬. তওহীদী জনতা মাঠে নামলে পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।

৭. আবার যুদ্ধ হবে।

৮. সরকার গদি টিকিয়ে রাখতে পারবে না ইত্যাদি।

এই অহংকার আল্লাহ বরদাস্ত করলেন না। আল্লাহ এদেরকে পাকড়াও করলেন এবং আমাদেরকে হাতে কলমে বুঝিয়ে দিলেন- কেন তিনি এই গোষ্ঠীকে মাইরের উপরে রেখেছেন এবং কেন এদের উপর সামান্য দয়া দেখানোরও প্রয়োজনবোধ করেন না। 

আল্লাহ আরও বুঝিয়ে দিলেন- এই গোষ্ঠীকে নিয়ে আমরা যেন মিথ্যা স্বপ্ন না দেখি। আল্লাহর রহমতের খাতা থেকে এদের নাম যেভাবে বাদ পড়েছে, আমরাও যেন আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা ও মুক্তির প্রয়াস থেকে এদেরকে বাদ রাখি। এরা দুনিয়ার আবর্জনা। এদের কাছে চাওয়ার কিছু নাই। এদের কাছে পাওয়ারও কিছু নাই। আল্লাহ এদেরকে জিইয়ে রেখেছেন শুধুই আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য।