নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

অন্ধ অনুসারীরা এখন মুখ দেখাবেন কীভাবে?

প্রকাশিত: এপ্রিল ০৮, ২০২১

কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে আলোচনার কেন্দ্র হয়ে রয়েছে হেফাজত নেতা মামুনুল হক। সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে তার প্রোমোদ ভ্রমণের বিষয় নিয়ে বহু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকে এই বিতর্কের শুরু হলেও কিছু গণমাধ্যমও বিষয়টি নিয়ে বেশ স্বরগরম। কিছু গণমাধ্যম তো আদাজল খেয়ে নেমেছে এটা প্রমাণ করতে যে, মামুনুল হক পরস্ত্রী নিয়ে রিসোর্টে গিয়েছিল লীলা করতে। গণমাধ্যমগুলোর পেছনেও যে একটা লম্বা হাত কাজ করছে সেটাও বোঝা যায় তাদের সংগৃহীত ফোনকলসহ বিভিন্ন এভিডেন্স দেখে। যাইহোক- এ সমস্ত বিষয় নিয়ে আমার এ লেখা নয়, বরং ভিন্ন একটি বিষয় নিয়ে আমি কথা বলব।

মামুনুল হক

এই মামুনুল হকসহ যারা ধর্মের ধ্বজা ধরে আছেন (পৃথিবীর সব অঞ্চলেই), ধর্ম প্রচার করছেন বলে দাবি করে থাকেন তাদের অনুসারীদের মধ্যে বেশিরভাগ দেখা যায় অন্ধ ভক্ত। যে কোনো বিষয়ে তাদের মন্তব্য এতটাই অসার, এতটাই যুক্তিহীন যা কল্পনা করা যায় না। এই যুক্তিহীন, নির্বোধ, উগ্র, অন্ধ ভক্তকুল দিয়ে ধর্মের বিজয় কীভাবে হবে আমার বুঝে আসে না। তাছাড়া তাদের এই অন্ধত্বের পেছনে এই ধর্মের ধ্বজাধারীরাও কি দায়ী নয়?

মামুনুল হকের এই ঘটনাতে কিছু অন্ধ ভক্তের কীর্তিকলাপের বিষয়ে বলছি-

১. মামুনুল হকের এই ঘটনার পর যখন জান্নাত আরা ঝর্নার একটি সাক্ষাৎকার ফেসবুকে ভাইরাল হলো- তখন শুরু হয়ে গেল অন্ধ ভক্তদের প্রতিবাদ। তারা প্রচার শুরু করল- মামুনুল হকের সাথে যেই নারী ছিল তার গায়ে ছিল কালো বোরখা আর যে নারী সাক্ষাৎকার দিচ্ছে তার গায়ে নীল বোরখা। ফেসবুক সয়লাব হয়ে গেল নীল বোরখা আর কালো বোরখার বিতর্কে।

২. একই বিষয় নিয়ে কিছু অন্ধ ভক্ত অতি উৎসাহী হয়ে প্রচার করতে লাগলেন- এই নারী আসলে সোনার গাঁওয়ের ছাত্রলীগ/ যুবলীগ নেতার স্ত্রী। সেই যুবলীগ/ ছাত্রলীগ নেতার সস্ত্রীক ছবির পাশে ঝর্নার ছবি বসিয়ে সেটা প্রমাণেরও চেষ্টা করেছে। তাদের দাবি- উদ্দেশ্যপ্রোণোদিতভাবে নিজের স্ত্রীকে দিয়ে লীগের নেতারা সাক্ষাৎকার তৈরি করেছে।

৩. কিছু অপরিনামদর্শী, নির্বোধ, অন্ধ ভক্ত প্রমাণ করে ফেললো- নীল বোরখা পরা এই নারী আসলে নষ্টা, ভ্রষ্টা, রাস্তার মেয়ে, বেশ্যা ইত্যাদি। যুক্তি দিল যে, পুলিশের কাছে ঝর্নার দেওয়া মোবাইল নাম্বার লিখে সার্চ দিলে ট্রু কলারে লেখা ওঠে ‘বডি মেসেজ সার্ভিস’ এবং অন্য একটি অ্যাপস-এ দেখায় ‘হট গার্ল ঝর্না’ ইত্যাদি। এই সমস্ত যুক্তি দিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় রাহবার, তাদের সিংহপুরুষ, তাদের অতি সম্মানের শাইখুল হাদিসের স্ত্রীকে তারা নষ্টা, ভ্রষ্টা প্রমাণ করে ছাড়লেন। এই কাজটি বহু মানুষ করেছে, তবু একজনের নাম এখানে উল্লেখ করছি- মুফতী রিজওয়ান রফিকী। একজন মুফতী হয়ে  কীভাবে এরা যথাযথভাবে খোঁজ-খবর না নিয়ে একজন নারীকে  অসম্মানিত করে বসে তার প্রমাণ এটা। ফেকাহ শাস্ত্র পড়ে তো মানুষ বিচারক হয়, এই কি তাদের বিচার-বিবেচনা! এই মুফতী কয়েকদিনে মামুনুল হকের সাথে থাকার বেশ কিছু ছবিও পোস্ট করেছে ফেসবুকে।

৪. কিছু অন্ধ ভক্ত প্রমাণ করতে লাগলেন অডিও কলগুলো সব এডিট করা। বহু রকম যুক্তি, তথ্য, উপাত্ত উপস্থাপন করতে লাগলেন একটা মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য (অথচ সেই সম্পর্কে তারা নিজেরাও জানে না)।

৫. কিছু অন্ধ ভক্ত জান্নাত আরা ঝর্নার ছেলেকে গালি দিতে লাগলেন, বয়স হিসাব করে বলতে লাগলেন এটা ছাত্রলীগের কর্মী, এটা মোটেও ঝর্নার ছেলে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

৬. বিরাট একটা সংখ্যার অন্ধ ভক্ত আছে যারা আবার তেমন কোনো কিছু লিখতে পারে না, তাদের মাথায় অত যুক্তি-তর্ক কাজ করে না। তাদের জেহাদ একটাই, যারাই হুজুরের বিরুদ্ধে কিছু বলবে তাদেরকে গালাগালি করতে হবে। গত কয়েকদিনে যে পরিমাণ গালি এই অন্ধভক্তরা ছেড়েছেন তা দিয়ে কয়েকটা ডিকশনারি তৈরি করা যাবে।

৭. এদের বেশিরভাগ আবার অত্যন্ত অসহিষ্ণু, উগ্র, বিশৃঙ্খল। কথায় কথায় এরা শত্রুপক্ষকে হত্যার হুমকি দেবে, নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দেবে আর মাঠে নামলে জ্বালাউ-পোড়াউ, ভাংচুর চালাবে। এদের বিরুদ্ধে গেলেই আপনি কাফের, মুর্তাদ, নাস্তিক, জিন্দিক, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের দালাল, সরকারের দালাল, ভারতের দালাল, আপনার ঠ্যাং কাইট্টা ফালাইবো, আপনারে হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে ইত্যাদি।

অন্ধভক্তদের এমন বহু বিতর্ক, বহু পোস্ট, বহু অসার কথা, বহু হুমকি এখনো ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি এগুলোর মধ্য থেকে সামান্য কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি অন্ধত্বের উদাহরণ স্বরূপ। এমন একটি উদাহরণও লিখিনি যেটা আমি নিজে পড়িনি। এরই মধ্যে অনেকেই হয়ত অনেক স্ট্যাটাস মুছে দিয়েছে (যেমন রিজওয়ান রফিকী তার স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেছে) তবে দুঃখ প্রকাশ করেছে, ক্ষমা চেয়েছে- এমনটা আমি দেখিনি।

আজকে হেফাজত নেতা মামুনুল হক লাইভে এসে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার মধ্য দিয়ে অনেকগুলো বিতর্কের অবসান হয়ে গেছে। যেমন তিনি স্বীকার করেছেন যে, নীল বোরখা পরিহিত যে নারীর সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছে সেটি তার দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না এবং যে ছেলেটি সাক্ষাৎকার দিয়েছে সেটি ঝর্নার ছেলে (সম্ভবত নাম আব্দুল্লাহ), আর তার ও তার পরিবারের ফোনকল ফাঁস করা হয়েছে যেটা অন্যায়। তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, তার প্রথম স্ত্রীকে তিনি মিথ্যা বলেছেন ম্যানেজ করার জন্য এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম বলতে গিয়ে প্রথম স্ত্রীর নাম বলে ফেলেছেন কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে। তিনি পরবর্তীতে পুলিশের কাছে সঠিক তথ্য দিয়েছিলেন।

যাইহোক, তার এই বক্তব্য অধিকাংশ অন্ধভক্তদের বিতর্কের বিপক্ষে গিয়েছে। এই বক্তব্যে তিনি কেবল একটি কথাই তুলে ধরতে চেয়েছেন যে, ঝর্না তার বৈধ স্ত্রী, তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয় এবং এ অধিকার তাকে ইসলাম এবং রাষ্ট্র উভয়ই দিয়েছে। কাজেই এ বিষয় নিয়ে যারা তার সাথে বাড়াবাড়ি করেছে তারা অন্যায় করছে। এ বক্তব্য নিয়ে হয়ত অনেকেই অনেক বিশ্লেষণ করবেন কিন্তু আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না, আমার এই লেখা কেবল অন্ধ ভক্তকুলদের করুণ দুর্দশা তুলে ধরার জন্য।

এই অন্ধ ভক্তরা এতই অস্থির যে, কোনো একটি বিষয়ে মত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের তর সহ্য হয় না, তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন মনে করে না, কোনো তথ্য তার বিরুদ্ধে গেলেই সেটা বানোয়াট বলে দাবি করে, আর শেষ অস্ত্র তো আছেই- অশ্লীল, অস্রাব্য ভাষায় গালাগালি। তারা তাদের অপকর্ম ঢাকতে গিয়ে বহু মানুষের নামে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য প্রচার করে। এই অন্ধত্ব দিয়ে কখনোই ইসলাম প্রচার হয় না, ইসলামের বিজয় এভাবে আসবে না। মিথ্যা দিয়ে কখনোই সত্য ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না। বরং এর মাধ্যমে ইসলামের বদনাম হচ্ছে।

এই শ্রেণিটি বছরের পর বছর ধরে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট সব গুজব রটিয়েছে, অপপ্রচার চালিয়েছে আর ফেসবুকে গালাগালি করেছে। কিন্তু আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা প্রচারণা চালাইনি, গালাগালির পরিবর্তে চেষ্টা করেছি যৌক্তিক উত্তর দিতে। এই আমাদের আদর্শ, এই আমাদের নেতার শিক্ষা, এটাই প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা।