যখন একটি পরিবারে নতুন সদস্যের আগমন ঘটে তখন পুরো পরিবার জুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তাকে ঘিরে থাকে পুরো পরিবারের মনোযোগ।
সময়ের স্রোতে নতুন পৃথিবীর সাথে পরিচয় হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব পেরিয়ে যখন অন্য একটি পরিবারের সাথে অপরিচিত নতুন একজন ব্যক্তির সাথে পরিচয় ঘটে। তখন অনেকের ক্ষেত্রেই স্বপ্নভঙ্গের মতো মহাবিপদে পতিত হয় । কারণ প্রতিটি মানুষই নিজের মতো চলতে চায়। চায় রাজত্ব করতে। হোক না সেটা অতি ক্ষুদ্র পরিসর বা একটা পরিবার। এই রাজত্ব করার পথে প্রথম যে বাঁধা তা হলো শাশুড়ী । (মেক্সিমাম নিয়েই আলোচনা হয়,মিনিমাম ইজ এক্সেপশন এন্ড এক্সেপশন অলোয়েজ এক্সেপশন) শাশুড়ী তার শাশুড়ীর অনেক কথা,পেটের জ্বালা,প্রহার সহ্য করে পেটের সন্তানকে আঁকড়ে ধরে আজ এ পর্যন্ত এসেছেন। আজ সে সুযোগ পেয়েছে প্রতিহিংসার আগুনটা নেভাতে। কিন্তু শত্রুরাতো গত হয়েছেন বহু আগেই । তাহলে উপায়?মনের দুঃখ মনেই পুষে রাখার উপায় নাই।
সেই মানুষটির সামনে যখন আরেকজন মানুষ (বধু) স্বামীর আদর সোহাগে নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছে তখন তার আর সহ্য হয় না। প্রতিহিংসার আগুনটা আরেকটু তেজে উঠে।
এবার সে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপায়।
পুত্রবধুর প্রতি সে শুরু করে তার শাশুড়ী থেকে পাওয়া কর্ম ও কর্মসূচি।
কখন, কোথায়,কিভাবে কোন কথা বলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীকে ক্ষেপিয়ে তোলা যাবে তার বাস্তব প্রয়োগ করার সুযোগ পায়।
এই যে দ্বন্দ্ব শুরু হলো এর শেষ কখন কোথায় হয় সেটা বলা সম্ভব না। এবার নিশ্চিন্তে স্বামীর সোহাগে থাকা বধুর স্বাভাবিক জীবনে ইতি ঘটে।
স্বামী সারাদিন কর্মে থাকলেও তার চিন্তা-চেতনা থাকে পরিবারের প্রতি । ঘরে ফিরে সন্তানের মুখে বাবা ডাক শুনলে সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তি মুহূর্তেই উবে যায়। কিন্তু ঘরে ফিরে যদি বউ-শাশুড়ির যুদ্ধ দেখা লাগে তাহলে অবস্থা কেমন হয় অনুমান করতে পারছেন নিশ্চয়ই।
এখানে কয়েকটা বিষয় আমায় ভাবিয়েছে। যেমন বিয়ের পূর্বে মেয়ের পড়াশুনা, রেজাল্ট, চেহারা, চুলের দৈর্ঘ্য পর্যবেক্ষণ করা হয় কিন্তু বিয়ের পরে সেইসব আর হিসেবে থাকে না। তখন সামনে চলে আসে হাতের রান্না। একটু এদিক সেদিক হলেই......। তবে বাইরের মানুষের কাছে কেউ প্রশংসা করেন আবার কেউ দুর্নাম করতে ভুলেন না। আমরা কি ভুলে যাই আমাদের মেয়েরাওতো অন্যের ঘর বউ। তার সাথে অন্য কেউ এমন আচরণ করলে সেটা কোন মায়ের ভাল লাগবে না এটা নিশ্চিত।
"ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ভিএস নাইপল লিখেছিলেন, ভারতীয় একেকটি পরিবার যেন একেকটি গোত্র যা তার সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়, পরিচিতি দেয় এবং “সমাজে অপ্রাসঙ্গিক, বাতিল হয়ে পড়া থেকে রক্ষা করে।"
এই কথা কি এখনকার পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে খাটে?
জনাব নাইপলের কথায় অন্যরা কি উত্তর দিবেন জানি না তবে আমার কাছে পূর্বের সেই ধারণাটা বর্তমানে ঠাকুরমার ঝুলির গল্পের মতো ঠেকছে।
তবে এটা মানছি যে এমন অনেক বধু ছিল, আছে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবারের সবাইকে নিয়ে সংসার করেছেন। শেষমেশ দেবর যখন নতুন কাউকে নিয়ে আসলো তখন বড় বউ না চাইলেও আলাদা হতে হলো এবং এই সংখ্যাটা এখন খুবই নগন্য।
যে ভাইয়েরা মিলে অন্যের সাথে মামলা-মোকাদ্দমায় জড়াতো সেই তারাই এখন নিজেদের মধ্যে মামলায় জড়াচ্ছে, এক ভাই আরেক ভাইয়ের হাত ভাঙ্গছে,কারণ তারা নিজেরাই অনেক সংখ্যক। বাইরের কারো সাথে মামলায় জড়াতে অনেক পথ মাড়াতে হয়। তার কোনো দরকার নেই। ঘরের দুয়ারেই যদি সঙ্গী পাওয়া যায় তাহলে পথ মাড়িয়ে দূরে কে যায়। এদের পরবর্তীরাও আবার এগুলো করবে।
ছেলে হোক কিংবা মেয়ে মানুষিকতা গড়ে উঠার ক্ষেত্রে পরিবারের বিশেষ করে মেয়ের প্রতি মায়ের শিক্ষাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, পারিবারিক প্রথা আমাদের এমনভাবে গড়ে তুলছে যা প্রমথ চৌধুরীর "বই পড়া" গল্পের শিশুকে জোর করে গোদুগ্ধ গেলানোর মতো ব্যাপার।
উচ্চশিক্ষিত, অর্থবিত্তসম্পন্ন হলেই বুঝি সুখী হওয়া যায় এমন ধারণা নিয়ে আমাদের পড়াশোনা করানো হচ্ছে নৈতিকতার মূল্যায়ন ছাড়াই। ফলে শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু মানুষ হচ্ছে না,বিত্তশালী হচ্ছে কিন্তু কারো কল্যানে আসছে না।
আমার সবকিছুতেই কেমন যেন ধর্ম চলে আসে। ধর্মের প্রভাব আমি সব জায়গায় অনুভব করি। ধর্ম কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায় আবার কখনো অবাক করে দেয়।
ব্যক্তিগত,পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে আমি ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করি। কখনো তা ইতিবাচক কখনো নেতিবাচক। যতোদিন না ধর্মের প্রয়োগ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজের প্রতি ক্ষেত্রে করা যাচ্ছে ততোদিন কাঙ্ক্ষিত শান্তি অধরাই রয়ে যাবে। ধর্ম-কর্ম তো হচ্ছে কিন্তু ব্যক্তি, পরিবার,সমাজ প্রতিটা স্তরইতো ফাসাদ,সাফাকুদ্দিমায় জড়িত তাহলে এটা কোন ধর্ম? কালিহীন কলম নয়তো?
প্রশ্ন রেখে গেলাম চিন্তাশীলদের প্রতি।
মন্তব্য করুন এখানে