নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

মুসলিমরা কেন শক্তিশালী হতে পারে না?

প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২১

যে কোনো শক্তিশালী ও অপ্রতিরোধ্য জাতির কয়েকটি উপাদান থাকতেই হয়। যেমন- শক্তিশালী আদর্শ, অবিসংবাদিত নেতা, সীসাগলানো প্রাচীরের মত ঐক্য, চিন্তা ভাবনায় উদারতা ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো যে জাতির মধ্যে যত শক্তভাবে স্থান পাবে, সেই জাতি তত শক্তিশালী হবে। এগুলো প্রাকৃতিক সূত্র। দুঃখজনক বিষয় হলো- আমাদের একটাও নাই। প্রথমেই আসি আদর্শের প্রশ্নে। যে ইসলামের আদর্শ নিয়ে আমরা বড়াই করি, সেই ইসলামের আদর্শ মেনে চলি না। আমাদের ধার্মিকতা গায়ের লোম আর পোশাক আশাকেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তব দুনিয়াতে ইসলামের যে হুকুম মেনে চলার কথা ছিল, সেটা হিসাব করলে দেখা যাবে আমাদের চেয়ে অন্য ধর্মের মানুষই বরং বেশি মেনে চলে। এমনকি নাস্তিকদেরও জীবনধারা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তারা ইসলামের অনেক আদেশ নিষেধ, ডিসিপ্লিন ইত্যাদি মেনে চলে যা আমাদের অতি ধার্মিকদের জীবনে দেখা যায় না। তার মানে আদর্শ থেকেও নাই আমাদের। 

মুসলিমরা কেন শক্তিশালী হতে পারে না

এবার দেখা যাক নেতৃত্বের অবস্থা। ইসলামের শুরুই হয়েছিল “নেতা” নির্বাচনের মাধ্যমে। যারা ইতিহাস জানেন তাদেরকে বলতে হবে না বিশ্বনবী মক্কায় প্রত্যাখ্যাত হয়ে মদীনায় এসেছিলেন এই শর্তে যে- মদীনার মুসলিমরা বিশ্বনবীর প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত মেনে চলবে। অর্থাৎ ইসলামের নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, জিহাদ, কিতাল, পর্দা, ঈদ, কুরবানি, জিকির, আজকার ইত্যাদি সবকিছু করার আগে মদীনার মানুষ সর্বপ্রথম যে কাজটি করেছিল তা হলো “নেতা” হিসেবে বিশ্বনবীকে স্বীকৃতি দেওয়া। তারপর সেই নেতার আদেশ নিষেধ মেনে চলাটাই ছিল তাদের কাছে ইসলাম। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো- আমাদের ইসলামে কোনো নেতা বা ইমাম লাগে না। কিতাব দেখে দেখেই পালন করা যায়। আর তা করতে গিয়ে কিতাবের হাজার রকমের ব্যাখ্যা থেকে জন্ম হয়েছে হাজারও নেতৃত্বের। দিনশেষে একজনও নেই যিনি পুরো জাতিকে কোনো একটা লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করবেন এবং যার আদেশ নির্দেশ মুসলিমরা ঈমানী দায়িত্ব মনে করে পালন করবে। 

তৃতীয়ত- ঐক্যের প্রসঙ্গ তুলে আর লজ্জা দিতে চাই না কাউকে। ভাগ হতে হতে এমনই অবস্থা হয়েছে যে, দুইজন আলেম নাকি এক বিছানায় শুইতে পারে না। মাহফিলের স্টেজে বসে এক আলেম আরেক আলেমকে গালি দেয়। এক ফেরকার সাথে আরেক ফেরকার শত্রুতা কেবল কয়েক যুগ নয়, হাজার বছর ধরে চলে আসছে। একজন খ্রিস্টানকে যুক্তি তর্ক ইত্যাদি করে মুসলিম বানানো হয়ত সম্ভব, কিন্তু একজন শিয়াকে সুন্নি বানানো কিংবা একজন সুন্নিকে শিয়া বানানো কখনই সম্ভব নয়। একইভাবে একজন আহলে হাদিসকে সুন্নি বানানো বা সুন্নিকে আহলে হাদিস বানানোও সম্ভব নয়। 

এদিকে চিন্তা ভাবনার দিক দিয়ে এই জাতির অন্ধত্ব, কূপমণ্ডূকতা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে তা বোঝার জন্য বেশিদূর যেতে হবে না, শুধু এতটুকু বুঝলেই হবে যে, পুরো বিশ্বের বিজ্ঞানীরা যেখানে করোনার ভ্যাক্সিন বের করতে রাতদিন খাটছেন, সেখানে আমাদের ধর্মীয় নেতারা শপথ করে বলছেন- মুসলমানদের করোনা হবে না। ওজু করলে আর নামাজ পড়লেই করোনা থেকে বেঁচে থাকা যাবে। এই যদি হয় মুসলিমদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দৌড়, তাহলে এদেরকে দিয়ে কতটুকু আশা করা যায়? 

সব মিলিয়ে হিসাব করতে বসলে হতাশ না হয়ে উপায় থাকে না। এরা হবে শক্তিশালী জাতি? এরা লিড দিবে বিশ্বকে? এরা করবে দুনিয়া শাসন? পাগলেও সে কথা বিশ্বাস করবে? এরা কেবল পারবে আহাজারি করতে আর গলাবাজি করতে। অমুক আমারে মারল কেন, অমুক আমারে কাটল কেন, অমুক আমারে বকল কেন- এইসব নালিশ এরা আসলে কাকে দেয়? ওরা ইহুদি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, নাস্তিক ইত্যাদি। ওদেরকে তো তোমরা নিজেরাই বলো ওরা কাফের, ওরা জাহান্নামে যাবে। তো ওরা অত্যাচার করবে, নির্যাতন করবে, হত্যা করবে এটাই তো স্বাভাবিক। ওদের নামে নালিশ দাও কেন? ওদের কাছে ভালো আচরণ আশা করো কেন? ভালো আচরণ তো তোমরা দিবা। তোমাদের জন্মই হয়েছে মানবজাতিকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করার জন্য। পুলিশ যদি চোরের হাতে মার খেয়ে আদালতে বিচার দিতে যায় তাইলে বিষয়টা হাস্যকর হয়ে যায় না কি?