নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

তাদের নারীবিদ্বেষ ও বিকৃত রুচির নেপথ্যে

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২১

তাদের নারীবিদ্বেষ ও বিকৃত রুচির নেপথ্যে
নারী-পুরুষকে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা ইসলামের নীতি নয়। আল্লাহর দেওয়া সহজ-সরল ইসলামে নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক হয়ে সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। শুধু অশ্লীলতা না করার ব্যাপারে সকলেই সতর্ক থাকতেন। 

কিন্তু ওই সহজ-সরল ইসলাম অতি পণ্ডিতদের পছন্দ হলো না। তারা ভাবলেন- ইসলাম এত সহজ সরল হবে কেন? যে ইসলাম মানতে কষ্টই হয় না তা দিয়ে কতই আর সওয়াব কামানো যাবে? ইসলামকে হতে হবে কঠিন। যত কঠিন হবে, মানতে যত কষ্ট হবে, তত বেশি সওয়াব মিলবে। ফলে বেশি সওয়াবের আশায় তারা নিজেদের পছন্দসই জটিল ও কঠিন এক ইসলাম বানিয়ে নিলেন, যেই ইসলামের পদে পদে শুধু হারাম আর হারাম ফতোয়া। এটা হারাম, ওটা হারাম, এটা নাজায়েজ, ওটা নাজায়েজ, এটা বেদাত, ওটা মাকরুহ, এটা শিরক ওটা কুফর ইত্যাদি ফতোয়া দিতে দিতে ইসলামের সরলতার বারোটা বাজিয়ে ইসলামকে বানিয়ে দিলেন সংকীর্ণ এক খাঁচাবিশেষ। তারপর সেই খাঁচায় ঢুকে জীবনটা তাদের হয়ে গেল রঙহীন, রসহীন, বৈচিত্র্যহীন অপ্রাকৃতিক জীবন। 

তারা নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাভাবিক অংশগ্রহণে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থার বিপরীতে নারীবর্জিত এক অপ্রাকৃতিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইলেন ইসলামের নামে। ফতোয়া দিতে লাগলেন, মেয়েরা ঘর থেকে বেরোতে পারবে না, মেয়েদের চেহারা পুরুষরা দেখতে পারবে না ইত্যাদি। মানুষের সহজাত প্রকৃতি, মানসিক ও আত্মিক স্থিতি তারা বুঝলেন না। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন, পুরুষ ও নারী উভয়ের ব্যাপারেই তিনি সর্বজ্ঞ, কাজেই তিনি জানেন যে, নারী আর পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। এটা ব্যক্তিগত জীবনের বেলায় যেমন সত্য, তেমনি সামাজিক জীবনের বেলায়ও সত্য। কাজেই আল্লাহ এমন কোনো হুকুম প্রদান করেননি যাতে সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়, যেই হুকুম মানবপ্রকৃতির সাথে যায় না। 

আল্লাহ কোথাও বলেননি নারীরা পুরুষদের সাথে কথা-বার্তা বলতে পারবে না, চলাফেরা করতে পারবে না, একে অপরের চেহারাও দেখতে পারবে না ইত্যাদি। এমন কিছুই আল্লাহ বলেননি, তিনি কেবল শালীনতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ব্যস, ওই শালীনতার মানদণ্ড মেনে চলে নারী-পুরুষ সব কাজ করতে পারবে, এক জামাতে সালাহ কায়েম থেকে শুরু করে এক রণাঙ্গণে যুদ্ধ পর্যন্ত সমস্তকিছু। শুধু সীমালঙ্ঘন না করলেই হলো। কিন্তু এই অতি পণ্ডিতরা ফেকাহ তাফসির হাদিসের মহাপণ্ডিত হয়েও স্বাভাবিক মানবপ্রকৃতিটা বুঝলেন না। তারা অযৌক্তিক ও অপ্রাকৃতিক ফতোয়া দিতে লাগলেন। কথায় কথায় শুধু হারাম আর হারাম।  

ইসলামে নারীযোদ্ধা

তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ফতোয়ার খাঁচায় বন্দী করে ফেললেন। নিজেরাই নিজেদেরকে সামাজিক অঙ্গনে সমস্ত রকম নারীসঙ্গ থেকে বঞ্চিত করে ফেললেন। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তারা এমন একটা সামাজিক পরিবেশে জীবন-যাপন করতে লাগলেন যেখানে নারী প্রবেশ নিষিদ্ধ। মানুষ কিন্তু তারাও। কাজেই তারাও মানবপ্রকৃতির ঊর্ধ্বে নন। ইসলামের নামে যে সংকীর্ণ খাঁচাটি তারা তৈরি করলেন, সেই খাঁচায় বন্দী জীবনযাপন করা তাদের জন্যও কঠিন হয়ে উঠল। কিন্তু যেহেতু নিজেরাই সাধ করে খাঁচায় ঢুকেছেন কাজেই তাদেরকে প্রচণ্ড মানসিক ও আত্মিক অতৃপ্তি চেপে রেখে হাস্যমুখে দিনযাপন করতে হলো। অন্যদের সামনে অভিনয় করে বোঝাতে হলো- এই যে আমরা খাঁচাবন্দী জীবনযাপন করছি, এতে কিন্তু আমাদের কষ্ট হচ্ছে না। আমরা খুব সুখে আছি, মজায় আছি।

তারা কতটা মজায় আছে তা আর আমাদের বুঝতে বাকি নেই। পত্র-পত্রিকার খবরাখবর যারা নিয়মিত পড়েন তাদেরকে বলে দিতে হবে না নব্য কওমে লুতের আবির্ভাবের কথা। ঘটনাগুলো এতই অরুচিকর যে, অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো পত্র-পত্রিকা পর্যন্ত গড়ায় না, ধামাচাপা দেওয়া হয়। এই মানসিক বিকৃতির কারণ কী? কারণ আর কিছু নয় খরস্রোতা নদীতে বাঁধ দিয়ে তার স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্থ করা হলে প্রাকৃতিক নিয়মেই ওই পানি জনপদে প্রবেশ করে আশপাশের লোকালয়কে প্লাবিত করে ফেলে। 

মানবপ্রকৃতির বিরুদ্ধে ধর্মের নামে যে বাড়াবাড়ি হয়েছে তার পরিণতিতেই জন্ম হয়েছে এই অরুচিকর মানসিকতা। আর যারা এখনও ওইরূপ মানসিক বিকৃতির পর্যায়ে যাননি তারা বাইরে যতই দরবেশের ভান ধরে থাকুন, মেয়েদের দিকে চোখ পড়লে ‘নাউজুবিল্লাহ’ বলে স্থানত্যাগ করুন, এই ইন্টারনেটের যুগে, স্মার্টফোনের যুগে, আকাশ-সংস্কৃতির যুগে, হলিউড-বলিউডের যুগে তাদের দৃষ্টিকে তারা মোটেও কলুষমুক্ত রাখতে পারছেন না এতে সন্দেহ নেই।

এরা কতটা অনাহারী মনোভাব নিয়ে থাকেন, সর্বদা অতৃপ্তির সাগরে হাবুডুবু খান তার প্রমাণ পাওয়া যায় হেযবুত তওহীদের মেয়েদের নিয়ে তাদের মন্তব্যগুলোতে। হেযবুত তওহীদের নারীরা পুরুষদের সাথেই আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। যথাযথ শালীনতা বজায় রেখে যার যার দায়িত্ব পালন করেন, সুস্থ পরিবেশে দেখা-সাক্ষাৎ কথাবার্তা, চলাফেরা, আনন্দ-উৎসব, অফিসকার্য সবই করে থাকেন ঠিক প্রকৃত ইসলামের সময়ে যেমনটা হত তেমনিভাবে। তাদের মধ্যে তরুণী-যুবতীরা যেমন আছেন, তেমনি বিগতযৌবনা বৃদ্ধারাও আছেন। কিন্তু ওই বিকৃতরুচির মানুষগুলোর কাছে তরুণী আর বৃদ্ধা বলে কথা নেই, ফেসবুকে কারো ছবি দেখলেই তাদের কলিজায় গিয়ে আঘাত লাগে। বাইরের দরবেশ চেহারার আড়ালে যে কুৎসিত কামুক ও বিকৃত রুচির মানসিকতা তারা লালন করেন তা বেরিয়ে আসতে থাকে তাদের প্রতিটি মন্তব্যে। 

এদের প্রত্যেকটা কমেন্ট শুরুই হয় ‘সুন্দরী যুবতী’ ইত্যাদি শব্দ দিয়ে। বোঝাই যায় তারা সুন্দরী যুবতী মেয়েদের জন্য অন্তরে কী পরিমাণ লালসা নিয়ে বেঁচে থাকেন। ফেসবুকে হেযবুত তওহীদের মেয়েদের ছবিগুলো প্রচার করে যে অসভ্যতা আর নোংরামীপূর্ণ ক্যাপশন তারা ব্যবহার করেন তা দেখে অনেকে মনে করতে পারেন এরা বোধহয় প্রচণ্ড নারীবিদ্বেষী, কিন্তু আদতে তা নয়। আসল ঘটনা হচ্ছে, তারা নারীদেরকে বাক্সবন্দি করলেও ভেতরের মানবপ্রকৃতিকে যেহেতু অস্বীকার করতে পারছেন না, উপেক্ষা করতে পারছেন না, কাজেই ভেতরে ভেতরে তাদেরকে প্রচণ্ড লালসা নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। তাদের ওই বিদ্বেষভাবের জন্ম ওই লালসা থেকে, অবদমিত কামস্পৃহা থেকে। 

শুধু হেযবুত তওহীদের নারীদেরকেই নয়, আদতে কোনো নারীকেই তারা সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেন না। কখনই নারীদেরকে সহযোদ্ধা ভাবতে পারেন না, বন্ধু ভাবতে পারেন না, নারীমূর্তি দেখলেই তাদের জিভে জল চলে আসে, যুগ যুগান্তরের জমানো ক্ষুধা-তেষ্টা চিড়মিড়িয়ে ওঠে। হয়ত সেই নারী আত্মীয়-স্বজন, এমনকি নিজের পরিবারের সদস্য হলেও। 

অসভ্যরা যা অবলীলায় করতে পারে সভ্যরা তা উচ্চারণও করতে পারে না। নইলে আরও অনেক কথা বলার ছিল।