নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

পরাজয়ের লগ্ন

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২১

আজ থেকে ৮০০ বছর আগের মিশর। ১২১৮ সনের জুলাই মাস। সালাহউদ্দিন আইয়ুবির ছোট ভাই সুলতান মালিক আর আদিল মিশরের উপকূলীয় শহর দিমিয়াতকে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।

ক্রুসেডাররা নীলনদের মোহনা থেকে নিজেদের নৌবহর মিশরে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। মুসলিমরা নদের মাথায় পানির উপরিভাগে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত শেকলের প্রতিবন্ধক তৈরি করে রাখে। সেই শেকলের গেইটের উপর দিকে একটি বিশাল উঁচু ব্রিজ ছিল যা নদের এক প্রান্ত থেকে দিমিয়াতের শহররক্ষা প্রাচীর অবধি পৌঁছে যায়। সমুদ্র থেকে নীলনদে আগমনকারী প্রতিটি নৌকাকে অবশ্যই সেই প্রিজের নিচ দিয়ে যেতে হবে। 

নৌবহর

ব্রিজের ওপর প্রচুর মুসলিম মুজাহিদকে নিয়োগ দেওয়া হয়। খ্রিষ্টানদের কোনো নৌবহর আক্রমণে এলে সেই ব্রিজ থেকে তাদের উপর অবিরাম তীরবৃষ্টি, আগুন ও পাথর ছোঁড়া হতো। 

চারমাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ক্রুসেডাররা শেষতক সেই ব্রিজ দখল করে নেয়। আরও সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্য তারা সেই শেকলের বেড়া কেটে দেয়। কিন্তু ততদিনে সুলতান সালাহ উদ্দিনের ছেলে আল মালিকুল কামিল মুহাম্মদ খানিকটা দূরত্বে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করে তার উপর বাহিনী বসিয়ে দেন। খ্রিষ্টানদের নৌবহর সেখানে পৌঁছুতেই দ্বিতীয়বারের মতো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বেধে যায়। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ইউরোপিয়ান নাবিকেরা সেই ব্রিজটিও দখল করে নেয়। 

এভাবে প্রতিটি কৌশল নিষ্ফল হতে দেখে আল মালিকুল আদিল একটি বিস্ময়কর কৌশল প্রয়োগ করেন। তিনি প্রচুর সংখ্যক পণ্যবাহী দৈত্যাকৃতির জাহাজ নির্মাণ করেন। এরপর সেগুলোর ওপর পাথরবোঝাই করে সারিবদ্ধ করে নীলনদের দু’তীর মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দেন। যখন শত্রুপক্ষের নৌবহর সেদিকে এগিয়ে আসে তখন সুলতানের নির্দেশে সেসব জাহাজে গর্ত করে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। 

দৈত্যাকৃতির সেই জাহাজগুলো এমনভাবে ডুবিয়ে দেওয়া হয় যে, সেগুলোর ঊর্ধ্বাংশ পানির স্তরের উপরে ভেসে থাকে। ওদিকে হাজার মণ পাথরের কারণে সেগুলোকে সেখান থেকে সরানোও সম্ভব নয়। অগত্যা খ্রিষ্টান ফৌজ সেগুলোকে সরানোর কোনো উপায় বের করতে না পেরে সেখানেই থেমে যায়। 

অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। খ্রিষ্টানরা সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে দিমিয়াত অবরোধ করে। মুসলিমরা দশ মাস মাস পর্যন্ত তাদের ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। তারা গেরিলা হামলা চালিয়ে ক্রুসেডারদের শক্তিহীন করার চেষ্টা করেন কিন্তু একসময় তাদের রসদ ও সামরিক সরঞ্জাম ফুরিয়ে আসে। এক ঝড়ের রাতে প্রচণ্ড প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ক্রুসেডাররা দিমিয়াতের প্রাচীর দখল করে নিতে সক্ষম হয়। 

ভোরের মধ্যেই তারা পুরো নগরী জয় করে নেয়। এরপর শুরু হয় ক্রুসেডারদের নির্বিচার গণহত্যা। তারা জামে মসজিদকে চার্চে পরিণত করে। খানিকটা দূরেই আল-কামিল তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু নীলনদের উন্মত্ত জলরাশির কারণে তার পক্ষে সামনে অগ্রসর হওযা সম্ভব ছিল না। এজন্যে তার পক্ষে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।