নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে শক্তিশালী করতে যা লাগবে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১

একই মাঠে, একই পরিবেশে, একই পিচে অন্য দল ব্যাট করে সাবলিলভাবে, আমাদের প্লেয়াররা ব্যাট করতে গিয়ে তিড়িংবিড়িং লাফায়। বল একবার ব্যাটের ডান কোনায় লাগে, একবার বাম কোনায় লাগে, একবার পায়ে লাগে, একবার পিঠে লাগে, একবার হাতে লাগে। ওরা কী সুন্দর আকাশে তুলে মারে, বল চোখের পলকে গ্যালারির বাইরে চলে যায়। আমাদের প্লেয়াররা দুইবার তুলে মারলে একবার বলে ব্যাটই টাচ করে না। আরেকবার বল লাগে ঠিকই কিন্তু যেদিকে চালায় সেদিকে যায় না। সোজা উপরে উঠতে থাকে। যদি ঠিকঠাক লাগেও- কোনো এক অজানা কারণে বল মাঠ পার হইতে চায় না। মনে হয় বলের ওজন চৌদ্দ কেজি। আকাশে যে ওঠানো গেছে সেটাই অনেক বেশি, মাঠের বাইরে পাঠানো সম্ভব না। 

আরে ভাই, তোরা কি ভাত খাইস না? নাকি ভাত খাওয়াতেই প্রবলেম? যেইটা খাইলে গায়ে শক্তি আসবে, একটু তরতাজা হবি সেটাই খা। রিক্সাওয়ালা দশটা টাকার জন্য হালের বলদের মত খাটে, তোরা শুধু ব্যাট-বল খেলেই লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক! কৃতজ্ঞতা বোধ বলে তো কিছু থাকা উচিত। টাকাগুলা করস কী? খাইতে পারোস না? শরীরে বল পাস না ক্যান? আফগানরা তোদের পরে এসে লম্বা লম্বা ছক্কা মারতেছে অবলীলায়, তোরা সেই উনিশশ কটকটি সাল থেকে খেলোস, এখনও ব্যাটে বলই লাগাইতে পারোস না। তোদের ব্যাটিং দেখে আমরাই লজ্জায় মরে যাই, তোদের লজ্জা হয় না ক্যান?

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে শক্তিশালী করতে যা লাগবে


অনেক চিন্তা করে দেখলাম, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে শক্তিশালী করার জন্য বেশি কিছু লাগবে না। নিচের এই কাজগুলো করলেই চলবে- 

ক. লিকলিকে সাইজের অপুষ্টির শিকার আধমরা কাউরে দলে না নেওয়া।

খ. অযৌক্তিক শট খেলে, সহজ ক্যাচ মিস করে, লিমিটলেস বাজে বল করে যখন সাহেবজাদারা ড্রেসিংরুমে ফিরবেন, তখন ভদ্রতা বজায় রেখে তাদেরকে দিয়ে কানধরে ওঠাবসা করানো এবং সেটার ভিডিও ধারণ করে টিভিতে সম্প্রচার করা। 

গ. দামে কম মানে ভালো হইলেও বিদেশি কোচ নিযোগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দেশের সাবেক প্লেয়ারদেরকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায়। আর অবশ্যই কোচরাও শাস্তির আওতায় থাকবে। দলের ব্যাটিং এর প্রবলেম হলে ব্যাটিং কোচ, বোলিং এর প্রবলেম হলে বোলিং কোচ এবং ফিল্ডিং এর প্রবলেম হলে ফিল্ডিং কোচ টেলিভিশনে সরাসরি সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজের ব্যর্থতার কৈফিয়ত দিবে। যদি সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারে তাইলে বিগত ছয় মাসের বেতন ফেরত দিবে। জরিমানা হিসেবে।

ঘ. প্লেয়াররা কথা বলবে স্মার্টলি। তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, তাদের কথাবার্তা, তাদের চলন-বলন, তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম- সবকিছুতে পেশাদারিত্ব থাকবে। ওরা নাকি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে, এই রিপ্রেজেন্টের ভাব ছুটাইয়া দিতে হবে। রিপ্রেজেন্ট করলে ভালোভাবে করতে হবে। সমালোচনার জবাবে তারা কিছুই বলতে পারবে না, সমালোচনার জবাব দিবে মাঠে ভালো খেলার মাধ্যমে। জনগণের খাবে, জনগণের পরবে, জনগণকে লজ্জিত করবে, আবার জনগণকে আয়না দেখতে বলবে- এত ভাব আসে কোত্থেকে? যদি সংবাদ সম্মেলনে বা ফেসবুকে কেউ ট্যারা কথা বলে তাইলে সঙ্গে সঙ্গে তারে পেশাদারিত্ব ভঙ্গের জন্য তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করতে হবে। 

ঙ. বছরের সরকারি ছুটির দিনগুলো ছাড়া বাকি সব দিন প্লেয়ারদের অনুশীলন চলবে। সকাল নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চলবে অনুশীলন, শরীরচর্চা ইত্যাদি। 

চ. টিমের প্লেয়ারদের সাথে ম্যানেজমেন্টের কোনো দূরত্ব থাকতে পারবে না। হয় প্লেয়ার বাদ যাবে, নয়তো ম্যানেজমেন্ট চেঞ্জ হবে।

[বি.দ্র: কোনো প্লেয়ার একই ভুল দুইবার করলে কান ধরে উঠাবসার পরিমাণ চারগুণ বাড়িয়ে দিতে হবে।]

এই কথাগুলো অনেকে ফান হিসেবে নিতে পারেন। আমি কিন্তু ফান করছি না। কথাগুলো অন্য কোনো দেশের প্লেয়ারদের ব্যাপারে বলা হলে সেটা ফান হইত। কিন্তু বাঙালি প্লেয়ারদের ক্ষেত্রে ফান না। আমরা বাঙালিরা এরকম নিয়ম-কানুনই ডিজার্ভ করি। আমরা ভালো আচরণের যোগ্য না। আমরা হইলাম চরম মাত্রার অলস, চরম মাত্রার অকর্মণ্য এবং চরম মাত্রার ইমোশনাল। আমাদের দিয়ে বড় কোনো অর্জন করাইতে হইলে পিঠের উপর চাবুক চালাইতে হবে। এই চাবুক আমাদেরকে ভাবের রাজ্য থেকে বের করে বাস্তবের রাজ্যে নিয়ে আসবে। তারপর আমরা বুঝতে পারব দুনিয়াটা ইমোশন দিয়ে চলে না। কাজ দিয়ে চলে। যুক্তি দিয়ে চলে। আমরা চাবুক ছাড়া ভালো হই না। বাঙালির যা কিছু অর্জন খোঁজ নিয়ে দেখেন কারো না কারো চাবুকের ঘা খেয়েই সম্ভব হইছে। এটাই সাইন্স।

বি.দ্র. লেখাটি টি-২০ বিশ্বকাপ-২০২১ বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে ৮ উইকেটে বাংলাদেশের পরাজয়ের দিন লেখা।