নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

আল্লাহর প্রকৃত দীন কে উদ্ধার করবে ওদের হাত থেকে?

প্রকাশিত: এপ্রিল ০৯, ২০২১

আমাদের সমাজে সামান্য অর্থ-সম্পদ চুরি-ছিনতাইয়ের দায়ে চোর-ডাকাতকে গণপিটুনি দিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়া হয় এমনকি হত্যাও করা হয়। অথচ নিম্নগামী দৃষ্টি যেমন শুধু ভূমিকে দেখে তেমনি আমরা ক্ষীণ দৃষ্টির কারণে দেখতেই পাচ্ছি না যে, আমাদের মহামূল্যবান ধর্মবিশ্বাসকে (ঈমানকে), চেতনাকে, উন্নতি-প্রগতির সম্ভাবনাকে, স্বপ্নকে চুরি করছে একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী কূপমণ্ডূক স্বার্থবাজের দল। তাদেরকে ঘৃণার পরিবর্তে সমীহ করে চলা হয়। নানা ইস্যুতে তারা শুরু করে দেয় তাণ্ডব অথচ তখনও নির্লিপ্ত থাকে প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষ। নানা কুকর্ম করে হাতেনাতে ধরা পড়লেও তাদের অন্ধ অনুসারীরা তাদের পক্ষ ত্যাগ করেন না, উল্টো যারা কুকর্মকে জনসম্মুখে তুলে ধরতে চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধেই সংঘাতে লিপ্ত হয়। আজ আমাদের সমাজের ধর্মব্যবসায়ীরা আমাদের সমস্ত সম্ভাবনাকে, ভবিষ্যৎকে, সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে চুরি করে, হাইজ্যাক করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে সত্য উদ্ভাসনের সম্ভানাকেই ম্রীয়মান করে দিচ্ছে।

তথাকথিত গণতান্ত্রিক দলগুলি ভোটের আশায় এই শ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীটির তোওয়াজ করে চলেন। মাঝেমধ্যে তাদের পরিচালিত মসজিদ, মাদ্রাসায় দান-খয়রাত করেন, মিলাদ, চল্লিশা, চেহলাম ইত্যাদিতে দাওয়াত দিয়ে ভুরিভোজ করিয়ে দেন, ব্যাস! এতেই মোল্লা সাহেব খুশি।

এই অন্ধত্বের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বললেই সর্বনাশ! একসঙ্গে সব ধর্মব্যবসায়ী একজোট হয়ে ধর্ম গেল, ধর্ম গেল জিগির তুলে দেয়। কাফের, খ্রিষ্টান, নাস্তিক ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলে। সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষগুলির বিশ্বাস এই যে, আলেম সাহেবরা যা বলেন, সত্য বলেন কারণ তাদের লেবাস-সুরত, মায়াবী সুরের কথা বার্তা ইত্যাদিতে মানুষ প্রভাবিত হয়। কাজেই তারা হিতাহিত কোনো বাচবিচার না করে, ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা না করে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের উপর। চলে ধর্মোন্মাদনার তাণ্ডবলীলা। বাঁধা পড়ে আইনের চোখ, বোবা হয়ে যায় শাসনদণ্ড, রুদ্ধ হয়ে যায় ন্যায়বিচার, ভূলুণ্ঠিত হয় মানবতা। নিরুপায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী শেষ পর্যন্ত ঐ ধর্মান্ধ মোল্লার পক্ষই নেন, কারণ জনতার রুদ্ররোষের ভয়।

আল্লাহর প্রকৃত দীন কে উদ্ধার করবে ওদের হাত থেকে

ধর্মব্যবসায়ীদের মিথ্যা উষ্কানিতে উত্তেজিত এই নির্বোধ জনতার রোষাণলে পড়েই ক্রুশবিদ্ধ হতে হয়েছিল যিশুখ্রিষ্টকে (যদিও যিশু তথা আল্লাহর নবী ঈসাকে (আ.) আল্লাহ উঠিয়ে নিয়েছিলেন), প্রকাশ্যে অগ্নি দ্বারা ভস্মীভূত করা হয়েছিল জিয়োরদানো ব্রুনোকে, ডাইনী আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল জোয়ান অব আর্ককে, হ্যামলক পান করিয়ে হত্যা করা হয়েছিল সক্রেটিসকে, ইব্রাহীমকে (আ.) আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে, রসুলাল্লাহর উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, তায়েফে তাঁকে পাথর নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত করা হয়েছে। যুগে যুগে এই ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি সভ্যতার বিকাশকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে, সত্যকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। আজও তারা সেটাই চায়। কিন্তু আর কতকাল ভয়ঙ্কর দানবরূপী এই শ্রেণীটিকে লালন করা হবে?

মানুষ যখন ত্রাহী সুরে চিৎকার করছে, বাঁচার আকুলতায় ভাসমান কচুরী পানা পর্যন্ত জাপটে ধরছে, যখন মানুষের তৈরি বিধান ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ধুকে ধুকে মরছে তখন যেটা এই মুহূর্তেই মানবজাতিকে বাঁচাতে পারে মহান আল্লাহ কর্তৃক পাঠানো সেই অনাবিল সত্যবিধান ‘দীনুল হক’- আজ বন্দী হয়ে আছে কূপমণ্ডূক ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে। এখন কে এই ধর্মব্যবসায়ী কূপমণ্ডূক বিচারবোধহীন জানোয়ারদের হাত থেকে একে উদ্ধার করবে?