নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

হেযবুত তওহীদের আদর্শ বনাম জঙ্গিবাদী আদর্শ

প্রকাশিত: মে ২২, ২০২১

হেযবুত তওহীদের আদর্শ বনাম জঙ্গিবাদী আদর্শ
[হেযবুত তওহীদ যখন ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতাসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি মহল জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে হেযবুত তওহীদকে জঙ্গি তকমা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে। এই লেখায় তাদের মিথ্যা অভিযোগের যৌক্তিক জবাব তুলে ধরা হয়েছে। লেখার দৈর্ঘ্য একটু বড় হলেও বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ে মতামত জানানোর অনুরোধ রইল।]

কোনো একটি আদর্শকে কখন জঙ্গিবাদী বা উগ্রবাদী আদর্শ বলে সাব্যস্ত করা যায়?

মূলত আদর্শের দু’টি রূপ থাকে। একটি লিখিত রূপ আর অন্যটি প্র্যাক্টিসিং বা ব্যবহারিক রূপ। যিনি আদর্শটি উপস্থাপন করেন তিনিই মূলত ঐ আদর্শের মূল ব্যাখ্যাদাতা, অন্য কেউ ব্যাখ্যা দিলে সেটা ভুল হতে পারে। আদর্শের লিখিত রূপের বহু রকমের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব, তাছাড়া লিখিত রূপের মধ্যেও কিছু অংশ থাকে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবার কিছু অংশ থাকে যার গুরুত্ব কম। এই গুরুত্ব নির্ধারণ করে দেন ঐ আদর্শের মূল প্রচারক। যারা ঐ আদর্শ গ্রহণ করবে তাদের কাজে-কর্মে, তাদের আচার-আচরণে, তাদের চলা-ফেরাতে আদর্শের ব্যবহারিক রূপটি ফুটে উঠবে। বেশিরভাগ মানুষ আদর্শের লিখিত রূপটি সঠিকভাবে অনুধাবন করতেই সক্ষম হন না। এ কারণে কোনো আদর্শের ব্যবহারিক রূপটি যখন সুন্দর হয়, কল্যাণমুখী হয়, মানবিক হয়, শক্তিশালী হয় তখন দলে দলে মানুষ ঐ আদর্শ গ্রহণ করে নেয়। আর যদি আদর্শটি কল্যাণমুখী না হয়, উন্নত ও প্রগতিশীল না হয়, উদার ও মানবিক না হয় তাহলে সেই আদর্শ মানুষ গ্রহণ করে না, সামরিক শক্তির বলে যদি কোনো ভূখণ্ডে সেটা প্রতিষ্ঠাও করা যায় তবু সেটা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে না। এক সময় মানুষ তা ছুড়ে ফেলে। আদর্শ যত উন্নত হবে, যত সুন্দর হবে তত বেশিদিন সেটা সমাজে টিকে থাকবে। 

প্রতিটা আদর্শেরই একটা মেয়াদ থাকে, মেয়াদ উত্তীর্ণ আদর্শ মানুষ ছুড়ে ফেলে। প্রতিটা আদর্শের এটা স্বাভাবিক পরিণতি যে, যুগের সাথে সাথে সেটা পরিবর্তিত হবে, এক সময় মূল জায়গা থেকে বহু দূরে সরে যাবে, সম্পূর্ণরূপে বিকৃত হয়ে যাবে। বিকৃত আদর্শ দিয়ে আর কল্যাণ আসবে না, তখন সেই আদর্শের হয় সংস্কার করতে হবে না হলে সেটা বাদ দিয়ে নতুন আরেকটি আদর্শ গ্রহণ করতে হবে। এজন্যই যুগে যুগে নবী-রসুল এসেছেন, সংস্কারক এসেছেন।

ইসলাম একটি আদর্শ। এর একটি লিখিত রূপ আছে এবং একটি ব্যবহারিক রূপ আছে। লিখিত রূপটি অবিকৃত (কোর’আনুল কারিম) আর ব্যবহারিক রূপটি বর্তমানে বিভিন্ন। যেহেতু বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছে কাজেই এটা অনস্বীকার্য যে, রূপগুলো বিকৃত, যদি সঠিক রূপ থেকেও থাকে তাহলে হাজারও রূপের মধ্যে একটি মাত্র সঠিক রূপ রয়েছে, কারণ সঠিকতা বা সত্যের রূপ একটিই হয়। এখন এই বিভিন্ন রূপের মধ্যে উগ্র ও জঙ্গিবাদী রূপ, অন্ধত্ব ও কূপমণ্ডূকতায় পূর্ণ রূপ, রাজনৈতিক ধান্দাবাজির রূপ, ধর্মব্যবসায়ীদের স্বার্থ উদ্ধার করাসহ বিভিন্ন মন্দ রূপও রয়েছে। এখন এক শ্রেণির মানুষ ধর্মান্ধ, মোল্লাতান্ত্রিক, উগ্র ও জঙ্গিবাদী রূপটাকে সামনে এনে পুরো ইসলামের বদনাম করছে, রসুলাল্লাহ (সা.) এর বদনাম করছে, কোর’আনের বদনাম করছে। তাদের এই বদনামের পেছনে সবচেয়ে বেশি দোষ অবশ্য আমাদেরই অর্থাৎ বর্তমানের মুসলিমদেরই। কিন্তু কোনোভাবেই এই দোষ রসুলাল্লাহর উপর বা কোর’আনের উপর দেওয়া যায় না। কেন, তা ব্যাখ্যা করছি-

রসুলাল্লাহ (সা.) মক্কাতে পরিচিত ছিলেন আল-আমিন (বিশ্বাসী), আস-সাদিক (সত্যবাদী) হিসাবে। শত্রু-মিত্র সকলেই তাঁর নিকট অর্থ-সম্পত্তি গচ্ছিত রাখত। নব্যুয়ত প্রাপ্তির পরও তাঁর বিরুদ্ধে  এমন অভিযোগ কেউ করেনি যে, তিনি কারও সম্পত্তি দখল করেছেন, কারো সাথে প্রতারণা করেছেন, নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত হয়েছেন, কারো সাথে মিথ্যা বলেছেন বা কারো কোনো ক্ষতি করেছেন। অথচ সেই মানুষটার উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে, হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, তাঁর সাথীদেরকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে কিন্তু তিনি ঐ সমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বা কারো কল্লা টাকার নির্দেশ দেননি। তাঁর সাথে উমরের মতো সাহসী, হামজার মতো বীর, আলীর মতো যোদ্ধা ছিল, তিনি যদি একটা নির্দেশ দিতেন যে, আবু জেহেলের মাথাটা কে এনে দিতে পারবে, তাহলে অতি অবশ্যই তাঁর সাহাবীরা সেটা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, কারণ তিনি জানতেন এটা ইসলাম নয়, এতে ইসলামের বদনাম হবে। তিনি তাঁর নিপীড়িত, নির্যাতিত সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মদীনাতে চলে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর মদীনার অধিকাংশ মানুষ তাঁকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করে নিল। তিনি সেখানকার সকল ধর্মাবলম্বীদেরকে নিয়ে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন, ধীরে ধীরে সমাজটি ক্ষুদ্র একটি নগররাষ্ট্রের রূপ নিল। সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্র-প্রধান, সেনা-প্রধান ও প্রধান বিচারপতি হলেন রসুলাল্লাহ (সা.)। 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

সঙ্গত কারণেই তিনি তাঁর রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য গড়ে তুললেন সেনাবাহিনী। মহান আল্লাহ পাক বিচার পরিচালনার মূলনীতি, সমাজ পরিচালনার মৌলিক নীতি, ধর্মীয় কার্য পরিচালনার নীতি এমনকি সেনা পরিচালনার বহু নীতি রসুলাল্লাহকে (সা.) দান করলেন যা কোর’আনুল কারিমে লিপিবদ্ধ আছে। এই নীতির আলোকে তিনি জাতি গঠন করলেন, জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিলেন, বহু যুদ্ধ-বিগ্রহ করলেন, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করলেন। কেউ যদি কোর’আনের একটি খণ্ডিত আয়াত তুলে ধরে বলে- ইসলাম জঙ্গিবাদকে উসকে দেয় তাহলে তা ভুল হবে। মনে রাখতে হবে কোর’আনের সব আয়াত সবার জন্য নয়। কোনো আয়াত রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য (মুসলিম নামক জাতির সর্বোচ্চ নেতার জন্য), কোনো আয়াত সেনা প্রধানের জন্য, কোনো আয়াত বিচারপতির জন্য আর কোনো আয়াত সাধারণ জনগণের জন্য। তিনি কী শিক্ষা দিয়েছেন তা কোর’আনের একটি বিচ্ছিন্ন আয়াত দিয়ে বিচার না করে বরং রসুলাল্লাহ (সা.) এর হাতে গড়া জাতিটির কর্মকাণ্ড দ্বারা বিচার করতে হবে। তাঁরা মক্কায় যদি হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন তাহলে তাদেরকে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী বা উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী বলার সুযোগ থাকত কিন্তু তাঁরা তা না করে বরং মদীনা নামক রাষ্ট্রকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদস্য হয়ে সুশৃঙ্খল উপায়ে জাতির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কমাণ্ড অণুসারে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছেন, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন সমাজের মানুষের শান্তির জন্য।

এবার বলি জঙ্গি চেনা যাবে কীভাবে?

যদিও জঙ্গি শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ যোদ্ধা কিন্তু ব্যবহারিক অর্থে জঙ্গি বলতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, ইংরেজিতে বলা হয় ‘militant’ বা ‘terrorist’. একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থান করে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে জঙ্গিরা, তাদের উদ্দেশ্য থাকে হিংসাত্মক উপায়ে, উগ্র পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা ও সাধারণ নিরস্ত্র নির্দোষ মানুষের উপর হামলা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়ে নিজেদের দলে লোকবল বৃদ্ধি করা। ইসলামের নাম নিয়ে যারা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালায় তাদের মতবাদ সাধারণত কট্টরপন্থী হয়, তারা নারীদের পর্দা, পুরুষের দাড়ি ইত্যাদি বিষয়ে অত্যন্ত কঠরতা প্রদর্শন করে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড যেমন সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, ভাষ্কর্য, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি তারা খারাপ চোখে দেখে, এগুলোকে তারা শয়তানের কাজ মনে করে। তারা গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, রাজতান্ত্রিক ইত্যাদি সরকারকে অবৈধ ও কুফ্ফার সরকার মনে করে, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকেও তারা সরকারেরই অংশ মনে করে, এজন্য তারা সরকারের সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা বা সহযোগিতার ব্যাপারে কথা বলে না, কোর্টে বা থানায় কোনো মামলা দেয় না। তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে গোপনে কিন্তু প্রশাসনের কাছে ধরা পড়লে সাধারণত নিজেদের জঙ্গিদলের সাথে যুক্ত থাকার বিষয়টা অস্বীকার করে না এবং তাদের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হয় খুব কমই। নারীদের ব্যাপারে তাদের ধ্যান-ধারণা খুবই রক্ষণশীল, তারা নারীদেরকে ঘরবন্দী করে রাখতে চায়, নারী শিক্ষা কেবল প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে চায় এবং সহশিক্ষার ঘোরতর বিরোধী তারা। এগুলো অধিকাংশ জঙ্গিগোষ্ঠীর সাধারণ বৈশিষ্ট্য, এ বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে জঙ্গিদেরকে চেনা যায়।

হেযবুত তওহীদকে জঙ্গি আখ্যা দেওয়া নিতান্ত মূর্খতা

আপাত দৃষ্টিতে হেযবুত তওহীদ একটি নতুন আদর্শ, কারণ ইসলামের যে ব্যবহারিক বা প্রাক্টিসিং রূপ আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে তা প্রকৃত ইসলামের আদর্শ বলে আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি প্রকৃত ইসলাম সমাজে প্রতিষ্ঠিত থাকলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসা, সামাজিক অন্যায়-অবিচার, রাজনীতিক সহিংসতা এগুলো কিছুই থাকত না। প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠিত থাকলে মানুষগুলো হতো ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল। তাদের মধ্যে ধর্মান্ধতা, কূপমণ্ডূকতা, ধর্মীয় গোড়ামী, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, নৈতিক স্খলন এ পর্যায়ে থাকত না। জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, সংস্কৃতি, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র সকল অঙ্গনে মুসলিমরা থাকত এগিয়ে, মুসলিমরা হতো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। আমরা বলছি- ইসলামের প্রকৃত রূপ (রসুলাল্লাহ যেটা সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন) গত ১৪শ’ বছর ধরে একটু একটু করে বিকৃত হতে হতে আজ একেবারে বিপরীতমুখী হয়ে গিয়েছে। এখন আমরা রসুলাল্লাহ (সা.) এর সেই প্রকৃত ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করছি। এখন আমরা আমাদের এই আদর্শ সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নিয়েছি দাওয়াতী (বালাগ) পথ। অর্থাৎ আমরা মানুষকে আমাদের আদর্শের ব্যাপারে জানাব, দাওয়াত দিব। এজন্য আমরা আমাদের এই আদর্শ তুলে ধরে বই প্রকাশ করেছি ৫০ এর অধিক (প্রতিনিয়ত বই লেখা চলছে), পত্রিকা (২০১২ সাল থেকে নিয়মিত ২ টি), সংকলন (মাসিক), হ্যান্ডবিল (বিভিন্ন সময়ে) ইত্যাদি প্রকাশ করে বিক্রি ও বিতরণ করে আসছি। সভা, সেমিনার, পথসভা, জনসভা, ওয়াজ-মাহফিল ইত্যাদির মাধ্যমেও আমরা আদর্শ প্রচার করি। আমরা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, প্রশাসন থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের, মাঠ-ঘাটের সাধারণ কৃষক পর্যন্ত সকল অঙ্গনের মানুষের কাছে আমাদের আদর্শ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। 

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদের জনসচেতনতামূলক র্যালী
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদের জনসচেতনতামূলক র্যালী

জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা ২ লক্ষাধিক সভা-সমাবেশ করেছি নিজস্ব অর্থায়নে। ধর্মীয় সম্প্রীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সর্বধর্মীয় সম্মেলন করেছি কয়েক হাজার। নারীদেরকে ধর্মীয় কুসংস্কার ভেঙ্গে সকল কাজে শালীনতার সাথে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে নারী সমাবেশ করেছি কয়েক হাজার। আমাদের প্রতিটি সভা-সমাবেশে নারীদের অংশগ্রহণ থাকে স্বতঃস্ফূর্ত। আমাদের সকল কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ থাকে পুরুষের পাশাপাশি। আমরা ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতি, ধর্মীয় অন্ধ্বত্ব ইত্যাদি নিয়ে যতটা কাজ করেছি তা বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর কোনো প্রতিষ্ঠান করেছে কি না  আমাদের জানা নেই। আমরা অনলাইনেও এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে ব্যাপক তদন্ত, গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যখন সরকার ও প্রশাসন সন্তুষ্ট হয়েছে তখন বহু সভা-সমাবেশে ১২ জন মন্ত্রীসহ বহু এমপি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবিসহ সর্বশ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করে আমাদের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং একাত্মতা পোষণ করেছেন।

তবুও কিছু মানুষের আমাদের ব্যাপারে সন্দেহ বাতিক রয়েছে, তারা বলে এখন তো হেযবুত তওহীদ ভালো ভালো কথা বলছে, ভবিষ্যতে শক্তি অর্জন করে যে তারা জঙ্গি হয়ে উঠবে না তার কী গ্যারান্টি আছে? এই সন্দেহ বাতিকের কারণ হলো- আমাদের কিছু বইতে জেহাদ-কেতাল সংক্রান্ত আলোচনা আছে, ইসলামিক আরও বিভিন্ন টার্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর উত্তরে আমি বলব- আমাদের ৫০ টার উপরে বই  আছে। সেখানে ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করা হয়েছে, সেখানে কোর’আন-হাদিসের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে, আল্লাহর দেওয়া মানদণ্ড মোতাবেক রাষ্ট্রনীতি, সামরিক নীতি, বিচার পদ্ধতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই বইগুলো সবচেয়ে বেশি পড়েছে কারা? নিশ্চয় হেযবুত তওহীদের সদস্যরা। এখন এই বই পড়ে তারা কি জঙ্গি হয়েছে? না, বরং তারা জাতির কল্যাণকামী হয়েছে, তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে, কাজ করছে। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, তিনি এখন আমাদের মাঝে নেই। তিনি এই আদর্শ আমাদেরকে সম্পূর্ণটা বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন, তিনি আর ফিরে আসবেন না। তাহলে তাঁর সমস্ত বই পড়ে, তাঁর কাছে প্রশিক্ষিত হয়ে আমরা আজও জঙ্গি হলাম না তবে কি তিনি আমাদের স্বপ্নে এসে জঙ্গি বানাবেন? তিনি যেহেতু আদর্শটা সম্পূর্ণরূপে বইয়ের পাতায় লিখে গেছেন এজন্য রাষ্ট্রনীতিও তিনি লিখে গেছেন, সামরিক নীতিও তিনি লিখে গেছেন। 

অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে একটা রাষ্ট্রের কোন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তাও তিনি আলোচনা করেছেন। যদি আমাদের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কখনও সিদ্ধান্ত নেয় তারা আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চলবে তখন এমামুযযামানের রাষ্ট্রসংক্রান্ত লেখাগুলো তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং জেহাদ সংক্রান্ত লেখাগুলো রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় একটি গোষ্ঠী ধরে নেয় হেযবুত তওহীদের বইতে যেহেতু জেহাদের কথা আছে কাজেই তারা জঙ্গি! কোর’আনের একটি আয়াত তুলে ধরে যেমন রসুলাল্লাহ (সা.) এর উপর জঙ্গি তকমা দেওয়া বোকামী ঠিক তেমনি আমাদের একটি বই থেকে দুইটা লাইন তুলে ধরে জঙ্গি প্রমাণের চেষ্টা করাও বোকামী। 

যেই শ্রেণিটি হেযবুত তওহীদকে জঙ্গি অপবাদ দিতে চায় তারা যদি একটু হেযবুত তওহীদের কার্যক্রম সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা অর্জন করতেন তাহলে আমাদেরকে এত কষ্ট করে কিছু লিখতেই হত না। নিজেরাই বুঝতে পারতেন হেযবুত তওহীদের মত প্রগতিশীল একটি ইসলামিক দলের নামের সাথে আর যাই হোক “জঙ্গি” তকমাটা যায় না। 

তারপরও যারা জোর করে হেযবুত তওহীদকে জঙ্গি তকমা দিতে বদ্ধ পরিকর, তাদের কাছে প্রশ্ন হলো- ‘আপনারা অনুগ্রহ করে সারা পৃথিবী খুঁজে একটি জঙ্গি দলের নাম বলুন তো যেই জঙ্গিদল জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সভা-সমাবেশ আয়োজন করে, র‌্যালি করে, জঙ্গিবাদকে ভ্রান্ত প্রমাণ করার জন্য ডকুমেন্টারি বানায় এবং নিজেরাই সেই ডকুমেন্টারি সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখায়, সচেতন করে। পারবেন তেমন জঙ্গিদলের নাম বলতে? আপনারা এমন একটি জঙ্গি দলের নাম বলুন যেই দল ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে বই লেখে, পত্রিকায় ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে হাজার হাজার আর্টিকেল লেখে, ভিডিও বক্তব্য দেয়, এবং সভা-সমাবেশ করে জনগণকে ধর্মব্যসার বিরুদ্ধে সচেতন করে। একটা জঙ্গিবাদী দলের নাম বলুন যারা সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে সভা-সমাবেশ আয়োজন করে এবং সেখানে ঘোষণা দেয়- “সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা”। আপনারা সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে একটি জঙ্গি দলের নাম বলুন যেই জঙ্গি দলের সভা-সমাবেশে নারীরা অবাধে অংশগ্রহণ করতে পারে, বক্তব্য দিতে পারে এবং নারীদেরকে আপাদমস্তক কালো কাপড় পরতে বাধ্য করা হয় না। বলার অপেক্ষা রাখে না- হেযবুত তওহীদ এগুলো করে দেখিয়েছে এবং এখানেই হেযবুত তওহীদের অনন্যতা। এগুলো জঙ্গিবাদী দলের বৈশিষ্ট্য নয়। সাধারণ জ্ঞান খাটালেই বোঝা যায় যারা ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদী কাজ করবে বলে প্ল্যান আছে, তারা আর যাই হোক ধর্মান্ধতার মৌচাকে ঢিল ছুঁড়বে না। তারা বরং ধর্মান্ধতার প্রচার ও প্রসার কামনা করবে। অন্যদিকে হেযবুত তওহীদ ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে চার শতাধিক হামলার শিকার হয়েছে এবং আন্দোলনের চারজন ভাই বোন শহীদ হয়েছেন ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে।

কোনো মানুষকে বিচার করতে হয় তার কর্ম দ্বারা, তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দ্বারা নয়। এরপরও যারা কেবল সন্দেহ বাতিক থেকে বলবেন যে, তবু বলা যায় না, ভবিষ্যতে তারা জঙ্গি হতেও পারে তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলব- ভবিষ্যৎ আসলে কেউ বলতে পারে না, আপনিও হয়ত ভবিষ্যতে গরু চুরি করে ধরা পড়বেন কিন্তু তাই বলে আপনাকে এখনই গরু চোর বলা বা সম্ভাব্য গরু চোর বলা ঠিক হবে না। আপনার অতীত ও বর্তমান নিয়েই আপনাকে বিচার করা উচিত।

লেখক: শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ।