নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

কোরআনের একটি অলৌকিক বৈশিষ্ট্য

প্রকাশিত: জুলাই ২২, ২০২১

ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে গিয়ে বলে থাকেন যে, “কোর’আন আল্লাহর রচনা নয়, আল্লাহ বলে কেউ নেই। এটি মোহাম্মদ (সা.) রচনা। তিনি একজন সাংঘাতিক চতুর ও প্রতিভাবান লোক ছিলেন। তিনি নিজে এটি লিখে আল্লাহর কেতাব বলে প্রচার করেছেন যেন মানুষ তাঁকে রসুল হিসাবে মেনে নেয়, তাঁর অনুসারী হয় (নাউযুবিল্লাহ)।” আমরা যারা আল্লাহ, তাঁর রসুল এবং আল্লাহর কেতাব আল কোর’আনের উপর পূর্ণ ঈমান এনেছি, আমাদের ঈমানী কর্তব্য হলো এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাব দেওয়া। 

তাদের এই অভিযোগের জবাবে আমাদের বক্তব্য হলো, আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য মানুষকে যুক্তি ও বুদ্ধিকে ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ আল্লাহ কখনোই আমাদের বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য সামনে এসে দাঁড়াবেন না। তাঁকে বিশ্বাস করতে হবে তাঁর নিদর্শন (আয়াত) থেকে। একইভাবে নবী রসুলগণ যে সত্যিই আল্লাহর প্রেরিত তার প্রমাণস্বরূপ আল্লাহ তাঁদেরকে কিছু মো’জেজা বা অলৌকিকত্ব দান করেছেন যেন সেগুলো দেখে মানুষ তাদেরকে বিশ্বাস করে। সকল নবীর মতো শেষ নবীর (সা.) বেলাতেও প্রশ্ন উঠল,  ইনি যে সত্যই নবী, আল্লাহর প্রেরিত তার প্রমাণ কী, চিহ্ন কী? কেউ এ প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দিতেন- আমার মো’জেজা কোর’আন। যদিও কোর’আন তার (দ.) একমাত্র মো’জেজা নয়। কিন্তু সত্যই তাঁর সর্ব প্রধান মো’জেজা কোর’আন। 

কোরআনের একটি অলৌকিক বৈশিষ্ট্য

কোর’আনে আগামী সমস্ত সময়ের জন্য মানুষের যা কিছু প্রয়োজন হবে সবই দেয়া আছে। মানুষের জ্ঞান ধীরে ধীরে যতই বাড়তে থাকবে ততই কোর’আনের আয়াতগুলির অর্থ বোঝা যেতে থাকবে। সম্পূর্ণ কোর’আন যে আজ বোঝা যেতে পারে না, কারণ অনাগত ভবিষ্যতের মানুষের জন্য অনেক তথ্য আল্লাহ এর মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন, এই সত্যটি আমাদের পণ্ডিতরা, মুফাস্সিররা উপলব্ধি করতে পারেন নি। ফলে তারা এর প্রতিটি আয়াতের তফসীর অর্থাৎ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন মুফাস্সির বিভিন্ন অর্থ, ব্যাখ্যা করেছেন, ফলে নানা মত-অভিমত সৃষ্টি হয়ে জাতির ঐক্য নষ্ট হয়ে গেছে এবং কোন কোন ব্যাখ্যা অদ্ভুত ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে। 

স্রষ্টা আল্লাহ তার বাণী, আয়াতগুলি যখন তার সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ দূতের (দ.) উপর অবতীর্ণ করতে আরম্ভ করলেন তখন প্রথম দিকেই মুদাস্সার অধ্যায়ে (সুরা) মানব জাতিকে সাবধান করে দিলেন যে, তারা যেন একে মানুষের রচনা বলে মনে না করে। বললেন- “যারা এই আয়াত সমষ্টি অর্থাৎ কোর’আনকে অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করবে, এর প্রতি ভ্রু কুঞ্চিত করে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে এবং বলবে এসব পুরনো যাদু এবং মানুষের তৈরি রচনা- তাদের আমি এমন আগুনে নিক্ষেপ করব, যে আগুন তাদের না ছাড়বে, না এতটুকু রেহাই দেবে (সুরা আল মুদাস্সির-২১-২৮)

এটুকু বুঝলাম, না বোঝার কিছু নেই। যখন কোর’আন অবতীর্ণ হয়েছিল তখন যারা ছিলেন তারাও বুঝেছেন। কিন্তু ঠিক তার পরের আয়াতটিতে বলেছেন- “এর উপর উনিশ” (সুরা আল মুদাস্সির ৩০)। এ কী কথা? আগের কথার সাথে, আগের আয়াতগুলির অর্থের সাথে মিল, সামঞ্জস্য কিচ্ছু নেই, হঠাৎ বলছেন, “এর উপর উনিশ”। কিসের উনিশ, কার উপর উনিশ? গত চৌদ্দশ বছর যারা কোর’আন পড়েছেন তারা এই আয়াতে এসে থমকে দাঁড়িয়েছেন। এ আবার কি? আপাতদৃষ্টিতে বেখাপ্পা এই আয়াতকে কোর’আন থেকে বাদও দেয়া যায় নি। কারণ স্বয়ং আল্লাহ এর রক্ষক, হেফাযতকারী। অন্য সব আয়াতের মত মুফাস্ফিররা এরও ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছেন, কারণ তারা এটা উপলব্ধি করেন নি যে ঐ আয়াত চৌদ্দশ’ বছর পরের মানুষের জন্য আল্লাহ দিয়েছেন, যখন মানুষ কম্পিউটার নামে এক যন্ত্র তৈরি করবে। তার আগে ঐ আয়াতের অর্থ বোঝা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এই সত্য না বোঝার ফলে মুফাস্সিররা এর ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন এবং স্বভাবতই এক একজন এক এক রকম ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন দোযখের উনিশ জন মালায়েক আছে ইত্যাদি। জাহান্নামে মাত্র উনিশ জন মালায়েক? ওখানে কোটি কোটিরও বেশি মালায়েক। মহানবীকে (দ.) ঐ আয়াতের অর্থ জিজ্ঞেস করা হয়ছিল কিনা জানিনা, হাদীসে পাইনি। জিজ্ঞেস করা হলেও তিনি তার জবাব দিতেন না বোধহয়, কারণ ঐ আয়াত তদানীন্তন মানুষের জন্য ছিল না, ছিল কম্পিউটারের যুগের মানুষের জন্য, যেমন আরও বহু আয়াত আছে যেগুলো আজ থেকেও ভবিষ্যতের মানুষের জন্য এবং যেগুলোর অর্থ আমরা আমাদের বর্তমানের জ্ঞান দিয়ে হাজার চেষ্টা করলেও বুঝবনা।

কিছুদিন আগে আরেক গবেষক মহাপণ্ডিত ড. রাশাদ খলিফা এই আয়াতের উপর গবেষণা আরম্ভ করলেন আমেরিকায়। আগের মুফাস্সিরদের গবেষণার সঙ্গে এর গবেষণার একটা বড় তফাৎ রইল। সেটা হল ড. খলিফা বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার কম্পিউটারকে কাজে লাগালেন। কম্পিউটারের মাধ্যমে নানা রকম হিসাব করে ড. খলিফা এক আশ্চর্য আবিষ্কার করলেন। তিনি যা আবিষ্কার করলেন তা অতি সংক্ষেপে হল এই- সমস্ত কোর’আন এই উনিশ সংখ্যার একটা আশ্চর্য হিসাবে বাঁধা। কোর’আনের প্রধান প্রধান তো বটেই এমনকি অনেক ছোট খাট বিষয়গুলি পর্যন্ত এই উনিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা। ওগুলো সব উনিশ সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য। 

প্রথমে ধরুন কোর’আন যে বাক্যটি দিয়ে আরম্ভ হয়েছে অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম’ এতে উনিশটি অক্ষর আছে। এই বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম বাক্যটি কোর’আনে ১১৪ বার আছে, প্রত্যেক সুরার আরম্ভে এবং সুরা নামলের মধ্যে। এই ১১৪ সংখ্যা উনিশ দিয়ে বিভাজ্য। (১৯ X ৬) = ১১৪। সম্পূর্ণ কোর’আন কেমন করে এই উনিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা, এমন কি এর কতকগুলি অধ্যায়ের (সুরার) আরম্ভে যে মুকাত্তায়াত অর্থাৎ অক্ষরগুলি আছে সেগুলির হিসাবও এই উনিশ সংখ্যার হিসাবে বাধা তা সবিস্তারে এখানে লেখা সম্ভব নয়। এজন্য ড. রাশেদ খলিফার The Perpetual Miracle of Muhammad বইটি পড়লে হিসাবটির পূর্ণ বিবরণ পাওয়া যাবে। 

প্রশ্ন হচ্ছে প্রায় সাড়ে ছিয়াশি হাজার শব্দের একটি বই তেইশ বছর ধরে যদি কোন মানুষ রচনা করেন তবে তার মধ্যে নিজের বক্তব্য, ভাষার সৌন্দর্য্য ইত্যাদি ঠিক রেখে সমস্ত বক্তব্যের মধ্যে কোথাও অমিল, বিরোধিতা না থাকে সেদিকে লক্ষ রেখে সেই সঙ্গে এই বিরাট বইটিতে উনিশ সংখ্যার একটা আশ্চর্য বাঁধনে বেধে দেয়া কোন মানুষের পক্ষে কি সম্ভব? বিশেষ করে ঐ মানুষটি যদি ইতিহাসের ব্যস্ততম মানুষ হন যিনি নিরবচ্ছিন্ন প্রবল প্রতিরোধের মুখে একটি সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলে নতুন সমাজ, নতুন জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, মানব জাতির ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছিলেন, দশ বছরে আটাত্তরটি যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন, ২৭ টিতে নিজে অংশ গ্রহণ করেছিলেন, বিশেষ করে ঐ মানুষটি যদি নিরক্ষর হন? 

যদি সম্ভব না হয় তবে দু’টি মাত্র সম্ভাবনা থাকে। সেই বিশ্ব সৃষ্টির প্রশ্নের মত অর্থাৎ এই হিসাবটা আকস্মিকভাবে (Accidentally) হয়ে গেছে, আর যদি তা না হয়ে থাকে তবে অবশ্যই এই কোর’আনের রচয়িতা হলেন স্বয়ং আল্লাহ। এই প্রশ্ন সমাধানে ড. রাশেদ খলিফা এ যুগের বিস্ময় কম্পিউটারের সাহায্য নিয়েছেন, যে যন্ত্রের হিসাবের উপর নির্ভর করে আজকের যান্ত্রিক সভ্যতা চলছে, যে যন্ত্রের হিসাবের উপর নির্ভর করে মানুষ চাঁদে গেছে, মঙ্গল গ্রহে, শনি গ্রহে এবং মহাকাশে রকেট পাঠিয়েছে। তিনি এই সমস্ত তথ্য কম্পিউটারে প্রবিষ্ট করিয়ে প্রশ্ন রাখলেন সমস্ত বইটাতে ওমুক ওমুক ভাবে উনিশ সংখ্যার হিসাবে বেধে যাওয়াটা আকস্মিকভাবে (Accidentally) হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? কম্পিউটার হিসাব করে জবাব দিল ৬২৬০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ এর মধ্যে ১, অর্থাৎ ৬২৬ লিখে তারপর চব্বিশটা শূণ্য যোগ করলে যে সংখ্যা হয় ততবারের মধ্যে মাত্র এক। এক কথায় অমনটি আকস্মিকভাবে হওয়াটা অসম্ভব। বাকি রইল এই হিসাবে সমস্ত কোর’আনকে বেঁধে দেয়ার কাজটা করেছেন হয় রসুলাল্লাহ (দ.) আর না হয় আল্লাহ। পেছনে দেখিয়ে এসেছি এটা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, কাজেই একমাত্র সিদ্ধান্ত হল এটা করেছেন স্বয়ং স্রষ্টা। এবং তাই এত বড় প্রমাণ সত্ত্বেও যারা একে আল্লাহর মুখের কথা বলে বিশ্বাস করবে না তাদের জন্য বলেছেন- তাদের আমি এমন আগুনে নিক্ষেপ করব যে আগুন তাদেরকে না ছাড়বে, না এতটুকু রেহাই দেবে (সুরা আল মুদাস্সির ২৮)।