নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

গুজবের গজব

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২০

এই নিয়েছে! ঐ নিল, যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,

চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।

চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গুজব শুনে গোটা গ্রামবাসী ছুটে ছুটে হয়রান। সবার চোখ উপরের দিকে। কানে একবার হাত দিয়ে পরীক্ষা করার অবসরটুকুও নেই কারো। ঠিক এমনটাই অবস্থা হয়েছে আজ আমাদের। কেউ একজন বলল, “জানেন ভাবী, পদ্মা সেতুর জন্য ছোট ছোট বাচ্চাদের মাথা কেটে নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সাবধান।” 

ব্যাস, আর যায় কোথায়। শুরু হয়ে গেল ছেলেধরা সন্দেহে লোক পিটিয়ে মেরে ফেলার মহোৎসব। গোটা দেশ আতঙ্কের জনপদে পরিণত হলো। নির্দোষ বহু নারী পুরুষ এই নৃশংসতার বলি হলেন। গণপিটুনিতে নিহত রেনুর শিশুকন্যা তুবা হয়তো এখনও তার মায়ের জন্য পথ চেয়ে আছে, কখন তার জন্য নতুন জামা নিয়ে ফিরবেন মা। 


গুজবের গজব
ছবি: দৈনিক ইত্তেফাক
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। শুধু ছেলেধরা সন্দেহে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০ জন নারী ও পুরুষকে হত্যা করা হয়। শতাধিক মানুষকে আহত পঙ্গু বানিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু পুলিশ প্রধান ঘোষণা করেন, নিহতদের মধ্যে একজন ব্যক্তিও ছেলেধরা ছিলেন না (বিবিসি)।


এভাবে কখনও কল্লাকাটা গুজব, কখনও ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব, জঙ্গি ধরার গুজব, চাঁদে কারো ছবি ভেসে ওঠার গুজব, প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব, বিভিন্ন বরেণ্য ব্যক্তির মৃত্যুর গুজব, কখনও ইবোলা বা করোনা সম্পর্কিত গুজব, অগ্নিকাণ্ডের গুজব, জলোচ্ছাসের গুজব, গ্রহাণুর ধাক্কায় পৃথিবী ধ্বংসের গুজব, লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব, কখনও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাশূন্যে হারিয়ে যাওয়ার গুজব আমাদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।

অনেকসময় কিছু কিছু গণমাধ্যমও গুজব ছড়িয়ে থাকে। প্রয়োজনে তারা এক ঘটনার ছবি অন্য ঘটনায় ব্যবহার করে গুজবপ্রিয় জনগোষ্ঠীকে ক্ষেপিয়ে দেয়। আর সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি বিকৃত করা, ক্যাপশন বদলে দেওয়া তো খুবই সাধারণ বিষয়। কঠিন কঠিন আইন করা হচ্ছে, তবু সব সময়ই অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে কোনো না কোনো গুজব।

অতীত থেকে বর্তমান, সব সময় সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হয়েছে ধর্মকে আশ্রয় করে। আর এ সকল গুজবের ফলে ধর্মোন্মাদনা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানো হয়েছে শত সহস্রবার। প্রতিটি দাঙ্গাকে, বিক্ষোভ প্রতিবাদের নামে সহিংসতাকে একটি লেবাসধারী গোষ্ঠী জেহাদ বলে, ঈমানী কর্তব্য বলে ঘোষণা দিয়েছে। 

এভাবে বারবার মানুষের বাড়িঘর গুড়িয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে বরণ করতে হয়েছে বীভৎস মৃত্যু। কখনও পাগলা কুকুরের মতো নির্মমভাবে পিটিয়ে, কখনও জবাই করে, কখনও বা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষাদীক্ষার এই যুগেও আমরা যেন বাস করছি ন্যায়নীতি বিবর্জিত কোনো এক বর্বর পাশবিক সমাজে। যে কেউ যে কোনো মুহূর্তে শিকার হতে পারেন এই গুজব নামক গজবের। একটি মনগড়া ফতোয়া কেড়ে নিতে পারে আপনার প্রাণ।

কেন এমন হচ্ছে? হুজুগ আর গুজবে মেতে উঠে সহিংসতায় লিপ্ত হওয়া কি ইসলামের শিক্ষা? এই বিশৃঙ্খল দাঙ্গাবাজিকে কি জেহাদ বলে আখ্যা দেওয়া যায়?