নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

মসজিদের ইমাম কি বেতনভুক্ত হতে পারেন?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২৪
বিগত কয়েকশ বছর থেকে মসজিদের ইমামগণ জনগণের বেতনভুক্ত। তারা যে কেবল নামাজ পড়িয়ে টাকা নেন, বিষয়টা এমন নয়। একটি মসজিদের দেখাশোনার জন্যও একটা লোক লাগে। ইমামগণই মসজিদের আয়-উন্নতির জন্য চেষ্টা করেন, আজান দেন, ঝাড়ু দেন, মক্তবে শিশুদের কোর’আন শিক্ষা দেন। এসব কাজের বিনিময়ে তিনি এলাকাবাসীর থেকে বেতন পেয়ে থাকেন। এই কাজগুলোর মধ্যে কিছু আছে একান্ত আল্লাহর জন্য, যেমন সালাত, কোর’আন শিক্ষা প্রদানকরা, দোয়া করা ইত্যাদি। এগুলোর কোনো বিনিময় মানুষ দিতে পারে না। কিন্তু মসজিদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য একজন সুইপারকে বেতন দিয়ে রাখা যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে তাকে ক্লিনার বলেই সম্বোধন করা হবে। আর মসজিদ পরিষ্কার রাখা নিঃসন্দেহে মহৎ কাজ ও পুণ্যের কাজ। 

মসজিদের ইমাম কি বেতনভুক্ত হতে পারেন?

কিন্তু ”ইমাম” বলতে কোনো ঝাড়ুদার বা কর্মচারীকে বোঝায় না। “ইমাম” বলতে বোঝায় নেতা। আল্লাহ বলেন, স্মরণ করো ওই দিনের কথা, যেদিন আমি মানুষের প্রতিটি দলকে তাদের ‘ইমাম’সহ ডাকব। (বনী ইসরাইল ৭১)। অর্থাৎ ইমামকে তাঁর জাতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে, তিনি ঐ জাতির পরিচালক হবেন।

প্রকৃত ইসলামের যুগে যিনি নামাজের নেতা ছিলেন, তিনিই সমাজের নেতাও ছিলেন। তাঁর হাতে দণ্ড প্রদান ও কার্যকর করার ক্ষমতা ছিল। তাঁকে কেন্দ্র করেই সামাজিক থেকে সামরিক যাবতীয় কর্মকাণ্ড আবর্তিত হত। যখন আল্লাহর সার্বভৌমত্বভিত্তিক জীবনবিধান জাতীয় জীবন থেকে তিরোহিত হল, ভিন্ন জাতির পদানত দাসে পরিণত হল মুসলিমরা, তখন এই ইমামগণ আর দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বা কোনো প্রকার প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অধিকারী রইলেন না। কিন্তু সেই পদবি তাদের রয়েই গেল। তারা হয়ে গেলেন “ইমাম” নামক কর্মচারী, যারা সমাজপতিদের হাতের পুতুলমাত্র। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের প্রতিরোধ যা একজন ইমামের প্রাথমিক দায়িত্ব, সেটা পালন করার কোনো অধিকার আর তাদের রইল না। 

”চেয়ারম্যান” বলতে একজন জনপ্রতিনিধিকে বোঝায়। যে কোনো মানুষ একটা চেয়ার টেনে বসলেই সে “চেয়ারম্যান” হয়ে যায় না। তেমনি ইসলামের “ইমাম” আর মসজিদে নামাজ পড়ানো, মসজিদ দেখাশোনা ও ঝাড়ু দেওয়ার ইমাম এক নয়। আজকের ইমামগণ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়েন, যে শ্রেণির অস্তিত্ব প্রকৃত ইসলামের যুগে ছিলই না। সুতরাং এই শ্রেণিটি মূর্তিমান ”বিদাত” বা সংযোজন। 

ইসলামী সরকার মসজিদের সার্ভেন্টদের বেতন দিতেই পারে তাদের সেবার বিনিময়ে কিন্তু খলিফাগণ ভাতা নিতেন ‘নামাজ’ পড়ানোর বিনিময়ে নয়, তাঁরা অর্ধবিশ্বের খেলাফতের দায়িত্ব, প্রশাসনের পরিচালনা করে তার বিনিময়ে ভাতা নিতেন। আজকে মসজিদের ইমামগণ ইসলামি সরকার থেকে ভাতা নেন না, ইসলামী সরকারই নাই। জীবনব্যবস্থা থেকে আল্লাহকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবু এই লোকগুলো নিজেদের ধর্মব্যবসাকে বৈধ করার জন্য সেই খলিফাদের ভাতা গ্রহণের উদাহরণ টেনে আনেন। 

মসজিদের কেয়ারটেকার হিসাবে টাকা নিবে এতে কোনো সমস্যা নাই, কিন্তু তারা তো নামাজের ইমামতির জন্য পারিশ্রমিক নিচ্ছে। এটাই দীনের বিনিময় গ্রহণ, Islam-business. কারণ নামাজ কেবলই আল্লাহর জন্য হতে হবে। বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই জন্য (আনআম ১৬২)। কিন্তু আমরা দেখি তারাবির নামাজ পড়িয়েও তারা টাকা নেন, সেখানো তো অন্য কোনো কাজের প্রসঙ্গ আসে না।