নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

পাল্টে গেল ফতোয়াগুলো

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারী ০৭, ২০২৪

ইমাম, ফকীহ ও মুজতাহিদগণ কোনো সমস্যার ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নীতি (উসুলে ফিকাহ) অনুসরণ করতেন। যেমন কোনো বিষয়ে কোর’আনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে তার বিপরীতে হাদিসের কোনো বক্তব্য তারা গ্রহণ করতেন না। আবার রসুলাল্লাহর কোনো স্পষ্ট হাদিস পেলে সে বিষয়ে কোনো ব্যক্তির বক্তব্য গ্রহণ করতেন না, তিনি যত বড় আলেমই হোন না কেন।


পাল্টে গেল ফতোয়াগুলো


২২ হিজরিতে জন্মগ্রহণকারী তাবেয়ী ইমাম শা’বী এ সম্পর্কে বলেছেন, ফতোয়া প্রদানকারীরা রসুলাল্লাহর (সা.) বরাত দিয়ে তোমাকে যা কিছু অবহিত করবে, তা গ্রহণ করবে। কিন্তু তারা স্বীয় রায় দ্বারা যদি কিছু বলে তাহলে তা পায়খানায় নিক্ষেপ করবে (দারিমি)।

রসুলাল্লাহর ঘনিষ্ঠ সাহাবী ও দুধভাই আবু সালামা (রা.) বৃদ্ধ বয়সে বসরায় গমন করেন। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হাসান বসরী তাঁর সাক্ষাতে গেলে আবু সালামা (রা.) তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনিই কি হাসান? বসরায় আপনার সাক্ষাৎ পাবার জন্য আমি সবচেয়ে বেশি উদগ্রীব ছিলাম। এর কারণ হল, আমি শুনতে পেয়েছি, আপনি নাকি ’স্বীয়’ রায় দ্বারা ফতোয়া দিয়ে থাকেন। এমনটি করবেন না। ফতোয়া কেবল রসুলাল্লাহর সুন্নাহ ও আল্লাহর কেতাব দ্বারা দিবেন।” (আল নাদর ইবনে শামায়েল)

কিন্তু বর্তমানে আমাদের অলিতেগলিতে লক্ষ লক্ষ মুফতি বাস করেন যাদের ফতোয়া দেওয়ার জন্য কোর’আন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। তারা মুকাল্লিদ টাইপের মুফতি। পূর্ববর্তী ইমাম ও আলেমগণ যা বলেছেন উনারা সেটারই পক্ষ অবলম্বন করবেন- এমন স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছেন। কোনো বিষয়ে পবিত্র কোর’আনের সুস্পষ্ট বিধান থাকলেও সেটাকে তারা চাইলে উল্টে দিতে পারেন এতই তাদের ক্ষমতা। 

অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায় এ বিষয়ে। যেমন মানুষকে হেদায়াতের আহ্বান করে বা দীনের শিক্ষা দিয়ে কোনো বিনিময় নেওয়া যাবে না এ বিষয়ে কোর’আনের সুস্পষ্ট আয়াতগুলো তারা দেখতে পান না। যারা আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করে তারা আগুন ছাড়া কিছুই খায় না (সুরা বাকারা ১৭৪), তোমরা তাদের অনুসরণ কর যারা তোমাদের থেকে কোনো বিনিময়, মজুরি কামনা করে না এবং সঠিক পথে আছে (সুরা ইয়াসীন ২১)। 

সকল নবী কর্ম করে খেতেন এবং ধর্মব্যব্যবসার বিরুদ্ধে তাদের উক্তি কোর’আনের পাতায় পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। তবু তারা দীনের শিক্ষা দিয়ে, কোর’আন পড়ে, ওয়াজ করে, ফতোয়া দিয়ে, দোয়া করে, নামাজ পড়িয়ে ইত্যাদি উপায়ে রুজি রোজগারকে হালাল মনে করেন। কেউ কোর’আনের নিষেধাজ্ঞা দেখিয়ে দিলে তাকে কাফের ফতোয়া দিয়ে দেন। এ ফতোয়া প্রদান থেকে আল্লাহর কেতাব, রসুলের হাদিস, নবী-রসুলগণের সুন্নাহ কিছুই তাদের ফেরাতে পারে না। 

আবার দেখুন, রসুলের সময় নারী-পুরুষ এক জামাতে মসজিদে সালাহ কায়েম করতেন। কিন্তু এখন নারীদের মসজিদে যাওয়াই নিষিদ্ধ। কোনো মসজিদে যদি নারীদের যাওয়ার অনুমতি থাকে, সেখানেও তাদের জন্য ভিন্ন রাস্তা, ভিন্ন কক্ষ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়; কোনোভাবেই যেন তাদের ছায়াও পুরুষ মুসুল্লিরা দেখতে না পারেন। কিন্তু কোর’আন নারী ও পুরুষ উভয়কেই মসজিদে যেতে হুকুম করেছে, রসুল ও তাঁর সাহাবিরা আমৃত্যু সেটাই আমল করে গেছেন। আপনি সেগুলো বর্তমানের মুফতিদের বোঝাতে পারবেন না। তারা আল্লাহর হুকুম ছুঁড়ে ফেলে ধমক দিয়ে বলবেন, আপনি কি আলেম? আমাদের পূর্ববর্তী আইম্মাগণ যে ফতোয়া দিয়ে গেছেন আমরা সেগুলোই মানি। আপনি কি তাদের থেকে বেশি বুঝেন?

তাই এখন নতুন করে উসুলে ফেকাহ লেখার সময় এসেছে। এই উসুলের ভিত্তি হবে একটাই- একজন আলেম যেটা বলেন সেটাই হল ইসলাম। কোর’আন কেবল পাঠ করলেই হবে, আমল করা লাগবে না। আমল করতে হবে কেবল আলেমদের নির্দেশ। যুক্তি- যে যামানায় নবী নাই, সেই যামানায় আলেমরাই নবী। আর আলেম কারা? যারা মাদ্রাসায় পড়েছেন তারাই আলেম। অন্য কারো এই আঙিনায় প্রবেশাধিকার নাই।