নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

যাদের অর্থনীতির জ্ঞান মুষ্টির চালে সীমাবদ্ধ, তারা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা বুঝবে কীভাবে?

প্রকাশিত: জানুয়ারী ০১, ২০২১

২০২০ সালের শুরুতে বাংলাদেশের পুরো কওমী অঙ্গন একজোট হয়ে দাবি উঠিয়েছিল যে, ভারতের নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশে লাশের মিছিল হবে, রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে তবু নাকি নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী জোর করে বাংলাদেশে আসতে চায়নি, তাকে কিন্তু বাংলাদেশের সরকারই ইনভাইট জানিয়েছিল।  

যাদের অর্থনীতির জ্ঞান মুষ্টির চালে সীমাবদ্ধ, তারা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা বুঝবে কীভাবে?

আমাদের কওমী আলেমরা সেবার খুব জোর গলায় প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে কেন রাখতে হবে? নরেন্দ্র মোদী কেন এত দরকারী মানুষ বাংলাদেশের সরকারের কাছে? বলা বাহুল্য যে, সেই প্রশ্নের জবাব তখন সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি, কারণ তখন সরকারের সাথে কওমী আলেমদের ভালোবাসার সম্পর্ক বিরাজ করছিল। কওমীরা তখনও সরকারের চোখে “ধর্মব্যবসায়ী” হয়ে ওঠেনি। 

যাই হোক, বছরের শুরুতে কওমীরা যেই প্রশ্নটা তুলেছিল, তার উত্তর সম্ভবত আমরা বছরের শেষে পরিষ্কারভাবে পেয়ে গেলাম। জানা গেল, ভারত থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ এবছর বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। 

এখন আমি ওই চাঁদমুখগুলো একটু দেখতে চাই যারা অনেক চেষ্টা করেও বুঝে উঠতে পারছিলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানে ইনভাইট করা কেন দরকারি। তারা কি এখন বুঝতে পারছেন? অবশ্য বুঝতে না পারলেও অবাক হব না। কারণ তারা চালান মাদ্রাসা, আর সরকার চালায় দেশ। বাড়ি বাড়ি মুষ্টির চাল সংগ্রহ করে মাদ্রাসা চালানো যায়, দেশ চালানো যায় না। যাদের অর্থনীতির জ্ঞান মুষ্টির চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তারা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা বুঝবে কীভাবে? না, এত জটিল সমীকরণ তাদেরকে বোঝার দরকারও নেই, শুধু এতটুকু বুঝলেই আপাতত চলবে- আমি যে বড় বড় হুংকার দিচ্ছি, কার বিরুদ্ধে দিচ্ছি এবং তার তুলনায় আমার জাতির শক্তি কতটুকু, সামর্থ্য কতটুকু! যারা এক মাস পেঁয়াজ না দিলে আমাদের পেঁয়াজের দাম বেড়ে আড়াইশ টাকা হয়ে যায়, যারা চাল না দিলে আমাদেরকে না খেয়ে থাকা লাগবে- তাদের বিরুদ্ধে হুংকার দেওয়া অর্থহীন। তাদের বিরুদ্ধে অহেতুক গলা না ফাটিয়ে সেই সময়টা কাজে লাগানো উচিত নিজ দেশের কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির পেছনে। 

আপনারা যখন ভাষণ দিতে দাঁড়ান, তখন মনে মনে ১৬ কোটি মানুষের নেতা হয়ে যান। তো ভালো কথা, ১৬ কোটি মানুষের খাবারের দায়িত্ব নিন তাহলে। চালের ঘাটতি মেটানোর উপায় বের করুন তাহলে। মাদ্রাসার লক্ষ লক্ষ ছাত্রকে রাজপথে নামিয়ে অনেক তো গরম গরম বক্তব্য দেওয়া হলো, এবার এদেরকে আবাদী জমিতে নামান। এদেরকে দিয়ে কৃষিকাজ করান, মাছের খামারে কাজ করান, গার্মেন্টসে কাজ করান, ভারতীয় পেঁয়াজের চাইতেও ভালো মানের পেঁয়াজের চাষ করান। পারবেন? জানি পারবেন না। কারণ এইসব পলিসি মেকিং আপনাদের কাজ নয়, এইসব উদ্যোগ নেওয়ার দায়বদ্ধতা আপনাদের নেই। আপনারা হলেন ভাবের নেতা, কাজের নেতা নন।

দুনিয়ার সমস্ত নেতারা চিন্তা করে তাদের অনুসারীরা কী খাবে, কী পরবে, কোথায় থাকবে ইত্যাদি; পক্ষান্তরে আপনারাই একমাত্র নেতা, যাদের অনুসারীদেরকে ভাবতে হয় নেতা কী খাবে। মুষ্টির চাল দিয়ে নেতাকে জিইয়ে রাখতে হয় গরম গরম হুংকার শোনার জন্য।