ভালোবাসা নিয়ে মোহাম্মদ আসাদ আলীর একটি অনবদ্য কথোপকথন। এই কথোপকথনের মাধ্যমে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রকৃত ভালোবাসা কী? এজন্য তিনি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন আবেগতাড়িত সিদ্ধান্তকে। যুক্তি আর প্রশ্নের আঘাতে প্রকৃত খোলসটা উন্মোচন করে দিয়েছেন এবং পরিচয় করিয়েছেন সত্যিকারের ভালোবাসার সাথে।- সম্পাদক
- তোমাকে ভালোবাসি।
- কেন ভালোবাসো?
- ভালোবাসতে ভালো লাগে বলে।
- যদি কখনও আর ভালোবাসতে ভালো না লাগে?
- এভাবে তো ভেবে দেখিনি।
- আচ্ছা, এখন তাহলে ভেবে বলো তো, আমার কোন বিষয়টা মূলত তোমার ভালো লাগে?
- তোমার কথা। খুব সুন্দর করে কথা বলো তুমি।
- যদি কখনও এই বাকশক্তি চলে যায়? তখন তো আর ভালোবাসার কিছু রইল না, তাই না?
- তা হবে কেন? আমি তো তোমার কাজকেও পছন্দ করি। খুব ক্রিয়েটিভ মানুষ তুমি।
- যদি কখনও অক্ষমতা ঘিরে ধরে আমাকে, তখন কী হবে? তখন কী দেখে ভালোবাসবা?
- এভাবে বলো না প্লিজ, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।
- সবকিছু করতে পারবে? রিয়েলি?
- হ্যা পারব।
- তোমার বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে?
- হ্যা, তাও পারব।
- যদি কখনও জানতে পারো আমি বেআইনী কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত তবু তুমি আমাকে সমর্থন করবে?
- হ্যা, অবশ্যই করব। কারণ তোমাকে ভালোবাসি।
- না, তুমি আমাকে ভালোবাসো না। তুমি আসলে আমার প্রতি মোহগ্রস্ত। ভালোবাসা আর মোহ এক জিনিস না। ভালোবাসা সত্য, মোহ মিথ্যা। ভালোবাসা চিরস্থায়ী, মোহ ক্ষণস্থায়ী।
- তোমার কেন মনে হলো আমি মোহগ্রস্ত?
- একেক মানুষের একেক রকমের ভালো লাগা থাকে। যেমন কারো মিষ্টি ভালো লাগে, কারো ঝাল ভালো লাগে ইত্যাদি। তেমনি মানুষ পছন্দ করার সময়ও একেকজনের একেকরকম গুণের মানুষ ভালো লাগে। আমার কিছু বিষয় তোমার ভালোলাগে। তাই তুমি আমাকে চাও- এটা হলো তোমার স্বার্থ। সেই স্বার্থ হাসিলের জন্য তুমি আমার সবকিছু মেনে নিতে রাজি আছো। এমনকি আমার অন্যায়ও। কিন্তু এটা ভেবে দেখছো না যে, আমি অন্যায় করলে আমার ক্ষতি হবে। আমাকে ক্ষতি থেকে বাঁচানোর চেয়ে তোমার কাছে নিজের স্বার্থ হাসিল করাই বেশি দরকারি মনে হয়েছে। ঠিক কিনা বলো?
- হয়ত ঠিক।
- এমনকি তুমি তোমার বাবা-মার সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করতে রাজি আছো। তার মানে তোমার কাছে কোনো সম্পর্কেরই কোনো মূল্য নাই। তোমার ব্যক্তিগত পছন্দই তোমার কাছে সবকিছু। এই পছন্দের পাল্লা আজ আমার দিকে ঝুলে আছে, তাই আমার প্রতি এত কদর। কাল যখন তোমার নফস অন্যদিকে ছুটবে, তখন আমিও গুরুত্ব হারাব। মনে রাখবে, সত্যিকারের ভালোবাসা নফস থেকে আসে না। এটা আসে সত্য থেকে। যে ভালোবাসা নফস থেকে তৈরি হয়, সেটা ব্যর্থ হবেই। কারণ নফসের কাজই হলো মানুষকে ধোঁকা দেওয়া। নফস ভালোও বোঝে না, মন্দও বোঝে না। বোঝে কেবল স্বার্থ। তার যেটা ভালো লাগে সেটাকে ভালোবাসে। যখন ভালোলাগা পাল্টায় তখন ভালোবাসাও হারিয়ে যায়। যার জন্য নিজের জীবন দিতে চেয়েছিল, তার জীবনকেই সে অতিষ্ঠ করে তোলে।
- তোমার কাছে ভালোবাসা তাহলে কেমন?
- আমার কাছে ভালোবাসা হলো ঐশ্বরিক জিনিস। ভালোবাসতে হয় সত্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য, কল্যাণের জন্য। যেই সম্পর্ক তৈরিই হয় সত্যের জন্য, সেই সম্পর্ক কখনই ধোঁকা দিতে পারে না। কারণ সত্য চিরন্তন। সময়ের সাথে সাথে সত্য পাল্টে যায় না। দু’জন মানুষ যত বেশি সত্যনিষ্ঠ হয়, তাদের ভালোবাসা তত দৃঢ় হয়। কাজেই ভালোবাসি বলার আগে হাজারবার ভেবে দেখা দরকার- আমি কিসের জন্য ভালোবাসি? নফসের জন্য? বৈষয়িক স্বার্থের জন্য? নাকি সত্যের জন্য?
মন্তব্য করুন এখানে