নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

যারা ইসলাম চায় আর যারা ইসলাম চায় না

প্রকাশিত: এপ্রিল ০৭, ২০২১

যারা ইসলাম চায় আর যারা ইসলাম চায় না- এই দুইটা পক্ষের মাঝে বিস্তর ফারাক। ইসলাম চাহনেওয়ালাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা কোথায় অবস্থান করছে সেটা তারা পরিমাপ করে উঠতে পারে নাই। বিগত কয়েক শতাব্দীতে ধর্মহীন সেকুলার সভ্যতা নিজেদেরকে কোন স্তরে নিয়ে গেছে সেটা তারা উপলব্ধিও করতে পারে নাই। মানুষের মন মগজ, আত্মাকে তারা পরিবর্তন করে দিয়েছে। জীবনের কোনো অঙ্গনে এখন মানুষের আল্লাহকে দরকার নাই, ইসলামের দরকার নাই। এক্সেপ্ট মৃত্যুপরবর্তী জীবন। আইনকানুন, দর্শন, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি কোনো কিছুতেই তারা অপূর্ণতা রাখেনি। সামরিক শক্তি দিয়ে, রাষ্ট্রকে সুসংহত করা, নাগরিকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি কোনো কিছুতে তারা ছাড় দেয়নি। দিনে দিনে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব আরো নিশ্ছিদ্র করা হচ্ছে। কি পরিমাণ শক্তি তারা অর্জন করেছে তা ঐ ইসলাম চাহনেওয়ালাদের কল্পনারও বাইরে। 

মসজিদে নামাজ
ছবির উৎস - বাংলা উইকিমিডিয়া


তো, এই প্রমত্ত শক্তিকে আল্লাহর শক্তির সামনে কিছুই না বলে সংখ্যা দিয়ে, জ্বালাও পোড়াও এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে পরাজিত করে ফেলার হুমকি নিতান্তই বোকামী ছাড়া আর কিছু নয়। সাময়িকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত করতে পারলেও পরবর্তীতে এর জন্য তাদেরকে ভুগতে হয়। কারণ হচ্ছে ঐ ইসলাম চাহনেওয়ালারা বাস্তবিক বিকল্প কোনো সভ্যতা ধারণ করে না। তারা কল্পনায় চৌদ্দশত বছর আগের সমাজ ব্যবস্থা, তৎকালীন সামরিক নীতি মগজে ধারণ করে বসে আছে। নিজেরা সময়ের সাথে আর আপডেট হয়নি। বর্তমান যে সুসংহত পৃথিবীর একটি রূপ আছে, রাষ্ট্রীয় কাঠামো আছে সেটা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার কোনোরূপ যোগ্যতাও তাদের মাঝে নেই। এই অবস্থায় কেবল ঈমানী জোড়ে তারা যে হুঙ্কার মারে আর সেগুলো শুনে কল্পনার যুগে বসবাস করা মানুষগুলো যে পেছনে ছোটে, তাদের সাথে সেই সর্বশক্তিমান আল্লাহও থাকেন না। ফলে তারা বিজয়ীও হয় না। 

আরো একটা বিরাট ফ্যাক্টর রয়ে গেছে। সেটা তারা উপলব্ধিও করতে পারে না। এই যে মানুষের মন মগজ থেকে আল্লাহ রসুল, পরকাল হটিয়ে দিয়ে সেখানে নিজেদের সৃষ্ট তন্ত্রমন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে এবং এর প্রবক্তারাই যে সম্মিলিতভাবে সেই মহাশক্তিধর দাজ্জাল সেটা তারা বুঝে উঠতে পারে নাই। ফলে তারা দাজ্জালের বিরুদ্ধে ইট পাটকেল নিয়ে লড়াই করে জিততে চাচ্ছে। এরচেয়ে বোকামো কাজ আর হতে পারে?

লড়াইয়ের আগে প্রতিপক্ষকে জানতে হয়। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা জানতে হয়। মাইক হাতে নিয়ে মুখে কথার খৈ ফুটিয়ে কিংবা কথার বোমা ছুড়ে এই শক্তিকে হটানো যাবে না। এর বিরুদ্ধে নিজেদেরকে পাল্টা শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। সেটা কথার বোমা আর মানুষের ঈমানী তেজে আগুন জ্বালিয়েও হবে না। বাস্তবিক রূপরেখা লাগবে, বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাগে, ক্ষোভে অন্ধ হয়ে ষাড়েঁর মতো লাল কাপড় দেখলেই তেড়ে গেলে চলবে না। ঐ লাল কাপড় একটা ফাঁদ। লাল কাপড় সরিয়ে নিয়ে বাঁধা পাবে শক্ত প্রাচীরে। মহা শক্তিশালী দানবের বিরুদ্ধে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে আক্রমণ করে বিজয় অর্জন করা যাবে না। একটা থাপড়া দিয়ে এক মাইল দূরে সরিয়ে দেবে। 

মানুষকে একটা পাল্টা আদর্শ দিতে হবে। পাল্টা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফোঁস ফোঁস করতে করতে সময় অনেক চলে গেছে। মানুষ প্রতারিত হয়েছে। হতাশ হয়ে গেছে। তাদের শক্তিকে যত অপব্যবহার করা হবে ততই হতাশার পরিমাণ বাড়বে। এই শক্তিকে অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত করার তরিকা ধরতে হবে। দুঃখের বিষয়, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা তাদের অনুসারীদেরকে শুধু হাওয়া দিয়েই ফোলাচ্ছেন। সারবস্তু কিছু দিচ্ছেন না। এই অসারতার কারণে আল্লাহও তাদের সাথে থাকছেন না। বিশৃংখল দাঙ্‌গা হাঙ্গামা, ফেতনা ফাসাদ আল্লাহর নীতি নয়। সংগ্রাম করতে হবে, জে*হাদ করতে হবে। সেটার জন্য যোগ্য মানুষ তৈরি হতে হবে। অমুক কাফের, তমুক কাফের ইত্যাদি ফতোয়া, আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ফায়দা হবে না। আগুন জ্বালানো সুস্থ মস্তিস্কের চিন্তা না। এগুলো উন্মাদদের প্রলাপ। 

মানুষের সামনে যুগোপযোগী আদর্শ হাজির করান। ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ সেটা নিজেদের কাজে কর্মে প্রমাণ করেন। জোর দিয়ে বললেই সেটা হয়ে যাবে না। মনেপ্রাণে-ভেতর বাহিরে এক হোন। ব্যক্তি স্বার্থ পরিত্যাগ করুন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিহার করুন। না হলে মানুষের এই আবেগ-অনুভূতি ও ঈমানী শক্তির অপব্যবহারের জন্য ইতিহাসের কাছে দায়ী থাকবেন। পরকালেও এ অপকর্মের জবাব দিতে পারবেন না।