নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

ফলেন পরিচয়তে

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২১

ব্রিটিশরা মাদ্রাসা বসিয়ে আমাদেরকে ১৪৬ বছর দীন শিক্ষা দিয়েছে, আমরা শিখেছি। মনে করেছি, ব্রিটিশরা কত ভালো, তারা ইসলামের কত খেদমত করছে। তারপর তাদের তৈরি করা শিক্ষাব্যবস্থার প্রোডাক্ট যে ধর্মব্যবসায়ী ওয়াজকারী গোষ্ঠী, আমরা শত শত বছর ধরে তাদের থেকে দীন শিক্ষা করছি। 

অথচ আল্লাহর রসুল বলেছেন, “তোমরা কীরূপ লোক থেকে তোমাদের দীন গ্রহণ করছো তা ভালোভাবে লক্ষ্য কোরো।” (হাদিস: মুসলিম, তিরমিযী, মেশকাত, শরহে নববী, মায়ারেফুস সুনান, মেরকাত, লুমাত, আশয়াতুল লুমাত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মোজাহেরে হক্ব।)

এখানে নিশ্চয়ই রসুলাল্লাহ এটা বোঝান নি যে, ইসলাম শিখতে হলে আগে দেখবে যে লোকটার দাড়ি, টুপি, জোব্বা আছে কিনা, সে মাদ্রাসায় পড়েছে কিনা বা কোন পর্যন্ত পড়েছে ইত্যাদি। কেননা দাড়ি, টুপি, জোব্বা, আরবীয় লেবাস আরবদেশের বিধর্মী ও কাফের মোশরেকদেরও ছিল। আর ব্রিটিশরা মাদ্রাসা দিয়েছে তাঁরও সহস্রাধিক বছর পরে। 

আল্লাহর কাছে মোমেনের মানদণ্ড হচ্ছে তার তাকওয়া অর্থাৎ যে ন্যায়-অন্যায় মেনে জীবন পরিচালনা করে। তিনি বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক বেশভূষার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও তোমাদের কাজ (আবু হোরায়রা রা. থেকে মুসলিম)।

সুতরাং আমরা বলতে পারি আলেম দুই প্রকার, সত্যনিষ্ঠ আলেম ও স্বার্থান্বেষী আলেম। তাই কারো কাছ থেকে দীনের জ্ঞান গ্রহণ করার আগে আমাদেরকে দুটো জিনিস বিবেচনা করতে হবে, প্রথমত সে এর দ্বারা কোনো বৈষয়িক স্বার্থ গ্রহণ করে কিনা। দ্বিতীয়ত, সে সত্যের উপর দৃঢ়পদ কিনা। 

স্বার্থ মিশ্রিত হলে যে কোনো জ্ঞানই বিষাক্ত হয়ে যায়, ঐ জ্ঞান আর মানুষের কল্যাণে আসে না, উল্টো মানুষের ক্ষতিসাধন করে। এ বিষয়ে আমীরুল মু’মিনীন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ও কা’ব ইবনুল আহবার (রা.) এর কথোপকথনটি খুবই শিক্ষণীয়। 

ওমর (রা.) একদিন কা’ব (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, “আলেম বা ইলমের অধিকারী কে?” তিনি উত্তরে বললেন, “যারা ইলম অনুযায়ী আমল করে।” ওমর (রা.) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, “কোন জিনিস আলেমদের অন্তর থেকে ইলমকে দূর করে দেয়?” তিনি উত্তরে বললেন, “লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাসিলের আকাঙ্ক্ষা।” (হাদিস: দায়েমী, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশায়াতুল লুময়াত, শরহুত্ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ, মোজাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)

সুতরাং নিজেদের অর্জিত মাসলা-মাসায়েলের জ্ঞানকে পুঁজি করে যারা ধর্মব্যবসায় লিপ্ত হন তারা আর আলেম থাকেন না, দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাসিলের আকাঙ্ক্ষা তাদের অন্তর থেকে জ্ঞানকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে, সেই জ্ঞান এখন কেবল পণ্য যা দিয়ে সে নিজেই উপকৃত হচ্ছে, যদিও সত্যিকার অর্থে সেটা উপকার নয় বরং এর দ্বারা সে নিজের ও অন্যদের পরকালকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। 

নিজের পরকাল ধ্বংস করছে কারণ আল্লাহ বলেছেন দীনের বিনিময়ে পার্থিব সম্পদ হাসিল করা আগুন খাওয়ার সমতুল্য (সুরা বাকারা ১৭৪)। আর জাহান্নামী ব্যক্তির অনুসরণ করে জান্নাতে যাওয়া অসম্ভব। যে নিজে অন্ধ সে অপরকে পথ দেখাবে কী করে?

আলেক্সান্ডার হ্যামিল্টন হার্লি
আলেক্সান্ডার হ্যামিল্টন হার্লি , প্রাচ্যবিদ


আলিয়া মাদ্রাসার শেষ খ্রিষ্টান অধ্যক্ষ
আলিয়া মাদ্রাসার শেষ খ্রিষ্টান অধ্যক্ষ

তারা মানুষকে অন্ধভাবে ধর্মের বিধান মানতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে, তারা মানুষকে নির্বোধ বানিয়ে রাখতে চায়। এভাবে ধর্মবিশ্বাস যখন অন্ধবিশ্বাসে পরিণত হয় তখন খোদ ধর্মই বিষে পরিণত হয়। যে-ই অন্ধের মতো সে ধর্ম পালন করবে সে-ই ধর্মের নামে গোড়ামিপূর্ণ আজগুবি ধ্যানধারণা আর চিন্তাহীন, বুদ্ধিহীন আচরণের চর্চাকারী হয়ে যাবে। 

খাদ্য থেকে পুষ্টির উপাদান পরিপাকের মাধ্যমে নিংড়িয়ে নিলে সেই খাদ্য পয়ঃবর্জ্যে পরিণত হয়, তেমনি ধর্ম থেকে ধর্মব্যবসার মাধ্যমে এর প্রাণকে নিংড়িয়ে বের করে নেওয়া হয়েছে, ফলে বর্তমানে প্রতিটি ধর্মই বিষে পরিণত হয়েছে। খাদ্য হিসাবে মানুষকে সেই বিষাক্ত বর্জ্যই গেলানো হচ্ছে। এ কারণেই ধর্ম থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ, ফতোয়াবাজি, সাম্প্রদায়িকতা, হুজুগে উন্মাদনা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষতিকারক রোগজীবাণু, প্যারাসাইট।

এই বিকৃত সারহীন ইসলাম শিখে কেউ রসুলের সাহাবীদের মতো উত্তম চরিত্রবান, উদার, পরোপকারী, নির্লোভ, দুঃসাহসী যোদ্ধা ও প্রকৃত মানবতাবাদী হয় না। উল্টো হয় আত্মকেন্দ্রীক, অহঙ্কারী, ধর্মজীবী, দুনিয়ালোভী, শক্তিমানের পদলেহনকারী। সুতরাং বিতর্ক অর্থহীন, ফলই গাছের পরিচয় বাতলে দিচ্ছে।