নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

মিডিয়ার মোল্লাতোষণ

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২১
মিডিয়ার মোল্লাতোষণ


দেশের প্রথম সারির বেশ কিছু মিডিয়া মোল্লাতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশি হুজুররা যেমন হাদিয়ার রেট বাড়ানোর জন্য ধর্মান্ধ পাবলিকের মন-মর্জি বুঝে কথা বলে, এই দেশি মিডিয়াগুলোও তেমনি ধর্মান্ধ পাবলিকের রুচি-অভিরুচি বুঝে নিউজ প্রকাশ করা শুরু করেছে। ব্যাপক লাইক, কমেন্ট, শেয়ার পাচ্ছে, সাবস্ক্রাইবার হুহু করে বাড়ছে এবং টিআরপিও বাড়ছে। কিন্তু দিনশেষে দেশটা অন্ধকার থেকে আরও ঘনীভূত অন্ধকারের দিকে যাত্রা করছে।

মিডিয়া নামের এই কতিপয় প্রতিষ্ঠান যেন দু’মুখো সাপে পরিণত হয়েছে। নিজেদের সামান্য স্বার্থের জন্য দেশকে দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে কার্পণ্য করছে না। সংবাদমাধ্যমের নাকি কোনো দল থাকতে নাই, তাদেরকে থাকতে হয় নিরপেক্ষ। কিন্তু আমাদের সংবাদমাধ্যমগুলো  নিরপেক্ষ থাকার বদলে বারোভাতারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এরা ধর্মনিরপেক্ষতেও আছে, মোল্লাতন্ত্রেও আছে। প্রগতিতেও আছে, ধর্মান্ধতাতেও আছে। ত্বহা আদনানেও আছে, পরিমণিতেও আছে। এদের না আছে কোনো আদর্শ, না আছে কোনো স্বকীয়তা। 

একেকটা প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকার ধর্মপাতা খুলে দেখুন- কী ভয়াবহ ধর্মান্ধতার চাষাবাদ হচ্ছে। ফেসবুকে হাহা রিয়্যাক্ট দেওয়া জায়েজ কিনা- এটা কোনো জাতীয় দৈনিকের আলোচ্য বিষয় হতে পারে? মাতৃভাষায় কুরআন পাঠ করলে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা হবে- এই থিমের উপর কোনো জাতীয় দৈনিকে আর্টিকেল প্রকাশিত হতে পারে? জাতীয় দৈনিকের ধর্মপাতায় নারীদের মসজিদে যাওয়া বারণ- এই ধারণা প্রচার করা যেতে পারে? আমাদের দেশে সবই সম্ভব হচ্ছে।

“ভাই, আমরা মোল্লাদের অপকর্ম নিয়ে কী বলব, আমরা নিজেরাই তো মোল্লা পুষি। ”- এটি হলো দেশের প্রথম সারির একটি সংবাদপত্রের সাংবাদিকের মন্তব্য। খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম ঘটনা আসলেই সত্য। নামকরা সেই পত্রিকার কার্যালয়ের আশেপাশেই বহু মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে এবং সেইসব মাদ্রাসার প্রধান ডোনার হলো ওই পত্রিকার মালিকশ্রেণি। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক- এরা নিজেরা সেক্যুলার হয়েও মাদ্রাসার উপর দরদ দেখাচ্ছে কেন? কারণ আর কিছু নয়, ধর্মান্ধদের ফতোয়ার বান থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা। মাঝে মাঝেই দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধর্মান্ধরা যেভাবে ফতোয়াবাজি শুরু করে সেই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে নিজেদের গৃহপালিত ফতোয়াবাজরা তাদেরকে রক্ষা করবে এটাই তাদের প্রত্যাশা। তবে যাই হোক- তাদের মাদ্রাসাপ্রীতি নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আপত্তিটা ধর্মান্ধতা নিয়ে। প্রথম সারির একটা মিডিয়া যে মাদ্রাসাগুলোকে প্রোমোট করছে, সেই মাদ্রাসাগুলোতেও যদি ধর্মান্ধতার ভাইরাস পুষ করা হয় তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?

মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় উপাদান। পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয় সেটা নিজেই একটা রেফারেন্স হয়ে যায়। মানুষ সেটাকে অভ্রান্ত হিসেবে বিশ্বাস করে ফেলে। তেমন কোনো পত্রিকায় যদি মিথ্যাবাদী ও ধর্মান্ধতার প্রচারক কোনো ব্যক্তিকে “প্রখ্যাত আলেম” হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়- তাহলে মানুষ ওই ধর্মব্যবসায়ীর মিথ্যা কথাগুলোকেই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা শুরু করবে এতে সন্দেহ নেই। তাছাড়া ধর্মীয় যে বিষয়গুলোতে বিতর্ক আছে, অর্থাৎ প্রগতিশীলরা এক ধরনের ব্যাখ্যা দেন আর ধর্মান্ধরা ভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দেন- এর মধ্যে মিডিয়ায় যদি ধর্মান্ধদের ব্যাখ্যাটা যত্ন সহকারে প্রচার করা হয় তাহলে জনগণ সেটাকেই চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করে নিবে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের মিডিয়াগুলো কি এই সহজ সরল কথাটা বোঝে না? নাকি জেনে বুঝেই এই পলিসি নেওয়া হয়েছে? 

বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে সুস্পষ্টভাবে দু’টো ধারা গড়ে উঠছে। একটা হলো- ধর্মান্ধতার ইসলাম, আরেকটা হলো প্রগতিশীল ইসলাম। মিডিয়াগুলোর উচিত ছিল ধর্মান্ধতার ইসলামকে বয়কট করে প্রগতিশীল ইসলামকেই মূল ধারার ইসলাম হিসেবে প্রচার করা। তাতে বহু চিন্তাশীল মানুষের দৃষ্টি খুলতে পারত। কিন্তু সামান্য পত্রিকার কাটতি আর টেলিভিশনের টিআরপির লোভ সামলাতে না পেরে যে মিডিয়াগুলো ধর্মান্ধতার পালে হাওয়া দিচ্ছে, তাদের সাথে ধর্মব্যবসায়ী ওয়াজশিল্পিদের তফাৎ কতটুকু?