বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলো মোটামুটি মূল ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বিতাড়িতই বলা চলে। রাজনৈতিকভাবে তারা বেশিদূর যেতে পারবে না তা বোঝা হয়ে গেছে। তাদের কর্মীদের নৈতিক মনোবল নষ্ট হবার শেষ প্রান্তে চলে এসেছিল আর এরইমধ্যে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় চলে আসায় বাংলাদেশের এই ইসলামপন্থী রাজনীতিতে হতাশ হওয়া তরুণ-যুবকরা প্রবলভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তারা এখন তালেবানকে “হিরো” ভাবছে। অনেকে তালেবান ফ্যান্টাসিতে ডুবে আছে, আবার অনেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে তালেবানের বিজয়-অভিযানে শরিক হবার জন্য আফগানিস্তানে পাড়ি জমাচ্ছে (তথ্যসূত্র: পুলিশ)। এর পরিণতি কী হতে পারে তা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না।
সেই পুরান কথাটাই ঘুরে ফিরে আসছে-
ধর্মবিশ্বাস এক মহাশক্তি এবং অবশ্যই বিস্ময়কর শক্তি। একটা সেক্যুলার দল ও ধর্মভিত্তিক দলের মধ্যে বাহ্যিক তফাৎ যাই থাকুক- শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেই ধর্মভিত্তিক দলের কর্মীরা অনেক বেশি এগিয়ে থাকে। যারা ইসলামপন্থী রাজনীতিতে ঢোকে, তারা বিরিয়ানির প্যাকেটের লোভে বা বড় ভাইয়ের অনুগ্রহ পাবার আশায় ঢোকে না। তাদেরকে বোঝানো হয় আল্লাহ-রসুল-কোর’আনের বাণী দিয়ে। তারা আল্লাহ ও রসুলের জন্য সংগ্রাম করছে বলে বিশ্বাস করে, ফলে তাদের নৈতিক শক্তি ও মনোবল থাকে সর্বোচ্চ। রাজনীতিটা তাদের পেশা নয়, বরং স্বপ্ন ও সাধনার বিষয়ে পরিণত হয়। সেই সাধনার জন্য তারা অনায়াসে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পারে। হাসিমুখে জীবন দিতে পারে, নিতেও পারে।
এই মহাশক্তিকে নির্মূল করা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে তো সম্ভব নয়ই, বেতনভুক্ত কোনো সামরিক বাহিনীর পক্ষেও সম্ভব নয়। কারণ সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়- পানির তৃষ্ণা পানি দিয়েই নিবারণ করতে হয়, আদর্শের শূন্যতা পূরণ করতে হয় আদর্শ দিয়ে। উগ্রবাদী ইসলামকে মোকাবেলা করতে পারে কেবল প্রকৃত ইসলাম। তালেবানরা যখন আফগানিস্তানে ইসলাম কায়েমের বুলি নিয়ে আগাচ্ছে- তখন সরকারী বাহিনী আমেরিকার মদদ নিয়ে টিকে থাকার প্রয়াসে মত্ত। বৈদেশিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাঁবেদারী করা ঠুনকো মনোবল নিয়ে তালেবানকে মোকাবেলা কীভাবে সম্ভব হতে পারে? তালেবান সদস্যরা ভাবছে তাদের প্রত্যেকটা জীবন যাচ্ছে আল্লাহর রাস্তায়, অন্যদিকে সরকারি বাহিনী কি তা ভাবতে পারছে? পারছে না। তারা দেখছে তাদের জীবন যাচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী নকশা বাস্তবায়নের পথে। আশরাফ গনি যদি বলতে পারতেন তালেবানরা যে ইসলামের নামে যুদ্ধ করছে সেটা আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত আদর্শ না, বরং আল্লাহ-রসুলের ইসলাম নিয়ে আমি দাঁড়িয়েছি, আমার সেনাবাহিনী দাঁড়িয়েছে, তাহলে সেটা হত আদর্শিক মোকাবেলা। তখন তিন লক্ষ সরকারি আর্মিও লড়াই করার মনোবল পেত। কিন্তু সেটা সম্ভব নয় কারণ আসলে তালেবানরা যেমন প্রকৃত ইসলাম নয়, তেমনি আশরাফ গনির সরকারও ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্য নয়। ফলে প্রচণ্ড দুর্নীতিগ্রস্ত, জনবিচ্ছিন্ন, বৈদেশিক শক্তির তাঁবেদার সরকারের যা পরিণতি হবার ছিল সেটাই হয়েছে।
ধর্মীয় এই ডামাডোলে আমাদের দেশের সরকারকে মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী দেখা যাচ্ছে। তবে সেই আত্মবিশ্বাসের ভিত্তিটা কি শুধুই সামরিক শক্তি? অস্ত্র ও বাহিনী দিয়ে কতটুকু কী অর্জন করা যায় বা প্রয়োজনের সময় এগুলো কতটা কাজে আসে তা আশরাফ গনি সাহেব প্রমাণ করে দিয়েছেন। এমনকি আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন বা সহযোগিতাও যে প্রয়োজনের সময় “পরিহাসে” পরিণত হয় সেটারও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এখন দেখার বিষয়- বাংলাদেশের সরকার আফগানিস্তানের আশরাফ গনির সরকার থেকে কী শিক্ষা নেয়?
মন্তব্য করুন এখানে