নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

শরিয়তের দৃষ্টিতে মাজার জিয়ারত!

প্রকাশিত: জানুয়ারী ২০, ২০২৪
মাজারে জিয়ারত নিয়ে বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের মধ্যে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। একদল মনে করেন মাজারে যাওয়া শেরক, বেদাত, না-জায়েজ। আরেকদল মনে করেন, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অলি-আউলিয়া, বাবা-মা ও মো’মেন বান্দাদের কবর জিয়ারত সওয়াবের কাজ। সাধারণ জনগণও এ ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত। 

শরিয়তের দৃষ্টিতে মাজার জিয়ারত

সম্প্রতি হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে কয়েক হাজার লোক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর ১২তম ওফাত দিবস উপলক্ষে তাঁর পারিবারিক কবরস্থান গোড়াই মাজার জিয়ারত করেন। এ সময় তিনি দরুদ পাঠ, আলোচনা সভা, অতিথি আপ্যায়ন ও দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। সেখানেই কোনো কোনো ব্যক্তি প্রশ্ন তোলেন যে, মাজারে এ জাতীয় আনুষ্ঠানিকতা শরিয়তে কতটুকু বৈধ। 

বস্তুত, মাজার একটি ফার্সি শব্দ, যার আরবি হলো কবর। কুবুর শব্দটি কোর’আনে আছে। কবর বা মাজার জিয়ারত কতটুকু বৈধ তা আমরা প্রথমে দেখব পবিত্র কোর’আনে। পবিত্র কোর’আনের একটি আয়াতে এ সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা পাওয়া যায় যেখানে আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের মধ্যে কারও মৃত্যু হলে আপনি কখনো তার জন্য সালাত পড়বেন না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়াবেন না; তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে অস্বীকার করেছিল এবং ফাসেক অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে (সুরা তওবা ৮৪)। 

আল্লাহর এই হুকুমের কারণে রসুলাল্লাহ একজন মোনাফেক সর্দারের জানাজায় অংশ গ্রহণ করেননি। সুতরাং কাফের, মোনাফেক ও ফাসেক ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত বৈধ নয়। কিন্তু রসুল (সা.) মদিনার সন্নিকটে অবস্থিত ‘জান্নাতুল বাকি’ নামক কবরস্থানে ওহুদ যুদ্ধে শহীদ আসহাবদের কবরের নিকটে গিয়ে দীর্ঘসময় অবস্থান করতেন ও দোয়া পাঠ করতেন। এমনকি হাদিসে ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর’ বলে কবরবাসীদের জন্য সালাম জানানোর নিয়ম আছে। কাজেই শহীদ, মো’মেন আত্মীয়স্বজন বা পূণ্যবান মো’মেন ব্যক্তির কবর জিয়ারত করা, পরিদর্শন করা, সালাম পাঠানো গোনাহের কিছু নয়। 

প্রকৃতপক্ষে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ ভারতবর্ষে হাজার হাজার মোজাহেদ, পীর, আউলিয়া, গাউস, কুতুব, দরবেশ এসেছেন। মৃত্যুর পর তাদের কারো কারো কবরকে কেন্দ্র করে মাজার, খানকাহ ও দরবার শরীফ গড়ে উঠেছে। পরবর্তীতে এসব মাজারকে কেন্দ্র করে একটি চক্র নানা ধরনের অবৈধ অর্থনৈতিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছে। সেখানে কবরপূজা, জুয়া-মাদকের প্রসার ঘটিয়েছে। এই ধরনের ফাহেশা কার্যক্রম দেখেই একশ্রেণির আলেম ওলামা শরিয়তের দৃষ্টিতে এ কাজটিকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। 

এছাড়াও কবরকে সামনে রেখে কবরে যিনি শায়িত আছেন তার কাছে যদি কেউ সন্তানাদি, রোগমুক্তিসহ নানান দুনিয়াবি সংকট থেকে পরিত্রাণ কামনা করে বা কোন প্রার্থনা করে তখন সেটা নিঃসন্দেহে শেরক কুফর হয়ে যাবে। কারণ কবরে শায়িত ব্যক্তির এগুলো দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা আল্লাহর। তাই এসব চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। 

কিন্তু সেখানে গিয়ে যদি কবরবাসীর প্রতি সালাম পাঠানো হয়, নিজেদের গোনাহের জন্য ইস্তেগফার করা হয়, কবরবাসীর নাজাতের জন্য দোয়া করা হয়, জিয়ারতকালে যদি নিজের হৃদয় পরকালের প্রতি বিগলিত হয় তখন সেটা দোষের কিছু নয়। সুতরাং কবর জিয়ারত তখনই অবৈধ হবে যখন জিয়ারত করার নামে অনৈতিক ও ফাহিশা কাজ করা হবে, শিরক কুফর হবে। কিন্তু শুধু দোয়া, ইস্তেগফার বা নিজেদের চরিত্র সংশোধনের জন্য কোন সফর করা হলে সেটাকে শরিয়ত বিরোধী বলার কোনো অবকাশ নেই। হেযবুত তওহীদের এমাম শরিয়তের এসকল সীমারেখা মাথায় রেখেই মাজার জেয়ারত করেছেন।