নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

কৃষিকাজে হেযবুত তওহীদের নারী

প্রকাশিত: জানুয়ারী ০৫, ২০২৪

হেযবুত তওহীদের মেয়েরা ছেলেদের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনের কাজেও ভূমিকা রাখেন এবং স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে থাকেন। এটা তারা জীবিকার প্রয়োজনেই করেন না, আন্দোলনের কাজ হিসাবেও করেন। কারণ এসব ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে আন্দোলনের ফান্ড আসে। ইসলাম নারীদেরকে ফসলের মাঠে কাজ করার অনুমতি দেয় কিনা সে প্রশ্ন যারা তুলবেন তাদের জন্য কিছু হাদিস উল্লেখ করি। 


কৃষিকাজে হেযবুত তওহীদের নারীরা


নবীজী সা:-এর স্ত্রী উম্মুল মোমেনীন খাদিজা (রা.) ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী মহিলা, যিনি নিজের ব্যবসায় পরিচালনা করতেন। তার সাথে বিয়ের আগে ও পরে নবীজী তার ব্যবসায় তদারকি করতেন। 

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত- পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার পর উম্মুল মোমিনিন সাওদা (রা.)-কে বাইরে যেতে দেখে ওমর (রা.) তাঁর সমালোচনা করেন। ঘরে ফিরে এসে তিনি নবীজীর কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন। তখনই নবীজী (সা)-এর ওপর ওহি নাজিল হয়। তারপর তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অনুমতি দিয়েছেন’ (বুখারি)।

নবীজীর অনেক সাহাবির আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো। এক বেলা খেলে পরের বেলা খাবার জুটত না। তাই অনেক সাহাবির স্ত্রীরও তার স্বামীর সাথে আয়-রোজগারে শরিক হতেন। সাংসারিক বোঝা লাঘবে স্বামীদের সহযাত্রী হতেন। এতে যেমন পরিবারের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হতো, তেমনি স্বামীর প্রতিও অনুগ্রহ করা হতো। 

বুখারির কিতাবুন নিকাহতে বর্ণিত একটি হাদিসে আমরা দেখি, আবু বকর (রা.)-এর কন্যা আসমা (রা.) তাঁর সাংসারিক জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, জুবায়েরের সাথে সবেমাত্র আমার বিয়ে হয়েছে। একটি পানিবাহী উট আর একটি ঘোড়া ছাড়া সম্পদ বলতে তার আর তেমন কিছুই ছিল না। আমি নিজেই ঘাস কেটে ও পানির পাত্র ভর্তি করে তার ঘোড়া ও উটকে আহার দিতাম। আবার আমাকেই আটার খামি বানিয়ে রুটি তৈরি করতে হতো যদিও আমি ভালো করে রুটি তৈরি করতে পারতাম না তখনো। তবে এ কাজে আমার ঘনিষ্ঠ ও নিঃশর্ত কিছু বান্ধবী প্রতিবেশী আমাকে সাহায্য করত। আমাদের এই দুরবস্থা দেখে নবীজী বাড়ি থেকে দুই মাইল দূরে একখণ্ড জমি চাষ করতে দিয়েছিলেন। সেই জমি থেকে খেজুরের আঁটি বেঁধে আমি নিজে মাথায় করে আনছিলাম। পথে নবীজীর সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। তখন তাঁর সাথে ছিলেন কিছু আনসারি সাহাবি। আমি তাদের সাথে পথ চলতে লজ্জাবোধ করছিলাম। নবীজী আমার ইতঃস্তত মনোভাব বুঝতে পেরে আমাকে অতিক্রম করে দ্রুত চলে গেলেন।

লক্ষ্য করুন, নবীজীর সমাজব্যবস্থায় নারীরা কিভাবে অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করত। পারিবারিক ব্যয় নির্বাহে স্বামীর সহযোগী হয়ে আবার কখনো কখনো স্বামীর চেয়েও বেশি দায়িত্ব পালন করে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ণতার নজির স্থাপন করত। বুখারি শরিফের কিতাবুল জুময়ায় বর্ণিত আরেকটি হাদিসে নবীজীর সাহাবি সাহল ইবনে সাদ একজন মহিলার কথা উল্লেখ করেন, যার নিজের ফসলি জমি ছিল। তিনি তার জমিতে সেচ দিয়ে গাজরের চাষ করতেন। সাহল ইবনে সাদসহ অন্যান্য সাহাবি জুমার দিন তার বাড়িতে বেড়াতে গেলে তিনি গাজর ও আটার তৈরি পায়েশ খেতে দিলেন।

নবীজীর কাছে এসে মহিলারা ব্যবসায়-বাণিজ্যের বিভিন্ন নিয়ম-নীতি জেনে নিতেন। নবীজী তাদের কাছে ইসলামের বাণিজ্যনীতি সবিস্তারে বর্ণনা করতেন। একবার এক মহিলা সাহাবি নবীজির কাছে এসে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি একজন মহিলা। আমি ব্যবসায় পরিচালনা করি। আমাকে ইসলামের বাণিজ্যনীতি সম্পর্কে অবহিত করুন। এরপর ওই মহিলা নবীজীর কাছ থেকে সবিস্তারে ব্যবসায়সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি জেনে নিলেন (তাবাকাতে ইবনে সাদ, অষ্টম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২)।

বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা:-এর স্ত্রী রায়িতা রা: হস্তশিল্পে দক্ষ ছিলেন। তিনি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করতেন এবং উপার্জিত অর্থ দান করে দিতেন (মুসনাদে আহমাদ-১৬০৩০)।

আমাদের দেশে বহু নারী এভাবেই মাঠে কাজ করেন, ব্যবসা বাণিজ্য করেন, বহু নারী গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন। তাদের এই জীবিকা নির্বাহকে ইসলামের পণ্ডিতরা সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়ার বাণও নিক্ষেপ করেন। এর ফলে নারীদের মনেও একটা হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়, তারা ভাবেন যে এতে পর্দার খেলাফ হচ্ছে বা ইসলামের বিধান লংঘন হচ্ছে। বস্তুত তা নয়। হেযবুত তওহীদ নারীদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন, জীবিকা অর্জনের স্বাধীনতা, কর্মের ও চলাফেরার অধিকারকে ইসলামের আলোয় তুলে ধরার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।