নির্বাচিত লেখা

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে রসুলাল্লাহর (সা.) সংগ্রাম

আল্লাহর রসুল (সা.) মানুষ কেনাবেচার দাসত্ব প্রথাকে নির্মূল করার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এই সংগ্রাম কেবল যে কাফেরদের বিরুদ্ধে তা নয়......

হেযবুত তওহীদের দৃষ্টিতে নারী স্বাধীনতা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারী ০৭, ২০২৪
পাশ্চাত্য সভ্যতার বহুলচর্চিত শব্দ - নারী স্বাধীনতা; কারণ পাশ্চাত্যে নারী স্বাধীনতার ধারণাটি প্রায় নতুন। উনিশ শতকের শেষ দিকেও খোদ ব্রিটেনে স্বামীরা স্ত্রীদের হাটবাজারে নিলাম ডেকে বিক্রি করত। তাদের কোনো বাকস্বাধীনতা ছিল না। 

হেযবুত তওহীদের দৃষ্টিতে নারী স্বাধীনতা

কানাডা ১৯১৭ সালে, যুক্তরাজ্য ১৯১৮ সালে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯২০ সালে তাদের দেশের নারীদেরকে ভোটাধিকার প্রদান করে। ১৯১৪ সনে মার্কিন সেনাবাহিনীতে নারীদের নিয়োগ আরম্ভ হয়। পক্ষান্তরে ইসলাম আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেই নারীদের মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে, দিয়েছে সকল সামষ্টিক কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ।

ইসলামপূর্ব আরবে নারীদের বেঁচে থাকাও ছিল পুরুষের ইচ্ছার অধীন। কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়ার মত ঘৃণ্য প্রথা প্রচলিত ছিল। পুরুষের বাঁদি হিসাবেই অধিকাংশ নারীকে জীবনযাপন করতে হত। 
অভিভাবকদের সিদ্ধান্তেই তাদেরকে বিয়ে করতে হত। এক গোত্র আরেক গোত্রকে আক্রমণ করে নারীদের লুণ্ঠন করে নিয়ে যেত, দাসীরূপে বিক্রি করে দিত। পুরুষরা যতসংখ্যক খুশি বিয়ে করতে পারত, যখন ইচ্ছে তালাক দিতে পারত। পিতার মৃত্যুর পর সৎমাকে সন্তানরা বিয়ে করত। দেহব্যবসা ছিল সামাজিকভাবে স্বীকৃত। এমন একটি সমাজে আল্লাহর রসুল এসে নারীদের মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করলেন। 

মক্কায় যখন তাঁর অনুসারীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চলছিল, তখন একদিন তিনি বলেছিলেন, ‘সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন একা একজন যুবতী নারী দিনে ও রাতে সারা গায়ে অলংকার পরিহিত অবস্থায় সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত পথ (৫৭৮ কিমি) অতিক্রম করবে। তার মনে আল্লাহ আর বন্য পশুর ভয় ছাড়া আর কোনো ভয় থাকবে না।’ এ থেকেই ধারণা পাওয়া যায় যে তিনি নারীদের জন্য কেমন একটি উন্মুক্ত, স্বাধীন ও নিরাপদ পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন। সত্যিই ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর অর্ধেক দুনিয়াতে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল।
নারী স্বাধীনতার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তিনি সর্বপ্রথম নারীদেরকে মসজিদ ভিত্তিক সকল জাতীয় সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করলেন। পুরুষরা অনেক সময় নারীদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিত। কিন্তু রসুলাল্লাহ নির্দেশ দিলেন, ‘তোমরা নারীদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দিও না।’ অনেক নারী মধ্যরাতে অতিরিক্ত সালাহ কায়েমের জন্যও মসজিদে আসতেন। 

ইসলাম বিয়ের ক্ষেত্রে কনের মতামত গ্রহণকে বাধ্যতামূলক করেছে, কনেকে তার দেনমোহর নির্ধারণের স্বাধীনতা দিয়েছে। কোনো মেয়েকে তার পরিবার জোর করে বিয়ে দিলে রসুলাল্লাহ সেই বিয়েকে বাতিল ঘোষণা করতেন। নারীরা রসুলাল্লাহকে নির্ভয়ে দফ বাজিয়ে গান শোনাতে পারত, যে কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারত। জুমার সময়ও নারীরা সরাসরি খলিফার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। এমনও হয়েছে যে, নারীরা খলিফা উমরের (রা.) সঙ্গে যুক্তিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন এবং খলিফাকে তাদের যুক্তির সামনে হার মানতে হয়েছে।

রসুলাল্লাহর যুগে নারীরা ছিলেন প্রাণবন্ত, উচ্ছল, আর বর্তমানে নারীরা পদে পদে প্রতিহত। ইসলামের দোহাই দিয়েই তাদের স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে। নারীকে সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, বুদ্ধিহীন ও পুরুষের অধীন বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিকৃত পর্দা প্রথা চাপিয়ে দিয়ে তার পোশাকের স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে। পরপুরুষ যেন নারীকে দেখতে না পায়, এমনকি কণ্ঠও শুনতে না পায় সে জন্য বহু মাসলা আবিষ্কার করা হয়েছে। 

তালেবান অধ্যুষিত অঞ্চলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা বারবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং আমাদের দেশেও মুফতিরা নারীদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাকেই যথেষ্ট মনে করছেন। ফলে নিজেদের যোগ্যতাকে বিকশিত করে জীবনের বৃহত্তর পরিসরে বিচরণ করার সুযোগটাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে যারা বাইরে গিয়ে কাজ করছেন তাদেরকেও নানারকম নিন্দাবাদের শিকার হতে হচ্ছে যা তাদেরকে হীনম্মন্যতায় ডুবিয়ে রাখছে। যে নারীরা শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করেন তারাও গোনাহ হবে ভেবে নিজেদের সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারেন না। এভাবে ইসলামের নামে বানোয়াট বিধি-নিষেধের বেড়াজালে নারীদের স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। 

এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদ দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এ আন্দোলন প্রতিটি কাজে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে, তাদেরকে উৎসাহিত করছে নিজেদের সকল সম্ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করার জন্য এবং আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে মানবজাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার জন্য। শালীনতা বজায় রেখে নারী ও পুরুষ উভয়কে যে কোনো কাজ করার, যে কোনো পোশাক পরার, যে কোনো শিল্পচর্চা করার, মতামত প্রকাশ করার, চলাফেরা করার পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা হেযবুত তওহীদ নিশ্চিত করেছে।